Logo
শিরোনাম

যে লেখায় দেলু রাজাকারের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন আসিফ নজরুল

প্রকাশিত:বুধবার ১৬ আগস্ট ২০২৩ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ৬৩৪৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বিএনপি-জামায়াতের আবাসিক বুদ্ধিজীবী আসিফ নজরুল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন। তার সেই লেখায় তিনি যেসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন, তা উপস্থাপিত হলো।

১০ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ তারিখে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সাঈদী সমাচার একজন ধর্মব্যবসায়ীর উত্থান শিরোনামে আসিফ নজরুল লিখেছেন-

মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী-বিরোধী সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভের মধ্য দিয়ে এদেশে মওদুদীবাদ ও ধর্ম ব্যবসার রাজনীতির অগ্রহণযোগ্য আবারো প্রমাণিত হয়েছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জামায়াতের মজলিসে শুরায় সাঈদীর অন্তর্ভূক্তির পর পরই দেশের আলেম সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সাঈদীর ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠেন। সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের মঞ্চনায়ক সাঈদীর বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত জনমত গড়ে ওঠে। দলমত নির্বিশেষে সকল মহলের বিরোধিতার মুখে সিলেট থেকে সাঈদীকে বিতাড়িত করা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থান তার মাহফিলের অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়।

নাছোড়বান্দা সাঈদী তারপরও গোপনে রাতের অন্ধকারে কিছু স্থানে প্রবেশ করেন। কড়া পুলিশ প্রহরায়, জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডারদের উপস্থিতিতে তার বক্তব্য রাখেন। এসব ম্রিয়মান মাহফিলের চরিত্র এবং ক্ষীণত্ব সাঈদীর ধর্মব্যবসায়ী স্বরূপকে আরো প্রকাশ্য, খোলামেলা করে তোলে। সমালোচনায়, আন্দোলনে, হরতালে সাঈদী একনিমিষে উঠে আসেন গোলাম আযমের মতো গণধিকৃত পরিচিতিতে।

সাঈদীর উত্থান পর্ব

রাজধানী ঢাকার সাঈদী পরিচিতির সূচনা ঘটে ১৯৭৫ সনের দিকে। সে সময় পুরনো ঢাকার আরমানিটোলার একটি মাহফিলে তিনি তফসীর করেন। সেই মাহফিলের অন্যতম উদ্যোক্তা চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মওলানা কারী ওবায়েদুল্লাহর দেয়া তথ্যানুযায়ী সে সময় প্রতি বছরই আরমানীটোলা মাঠে তফসীরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হত। ৭৫ কিংবা ৭৬ সনের এরকম একটি মাহফিল আয়োজনের পর্যায়ে কিছু মুসুল্লী (মওলানা ওবায়েদুল্লাহ বলেন পরে শুনেছি, তারা জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।) সাঈদী আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব করেন। সাঈদী সে সময় খুলনায় মোটামুটি পরিচিত হলেও ঢাকায় তাকে সেভাবে কেউ চিনতেন না।

আরমানিটোলা মাহফিলে আমন্ত্রিত হবার পর সাঈদী প্রথম ঢাকায় তফসীর করার সুযোগ পান। অত্যন্ত দীনবেশে সাদামাটা পোশাকে মাহফিলে আগত সাঈদীর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা মাহফিল কমিটির পক্ষ হতেই করা হয়। আরমানীটোলার পর সাঈদী লালবাগ ও চকবাজারে আরো দুটো মাহফিলে তফসীর করেন। এসব মাহফিলে সর্বপ্রথম তিনি গানের সুরে কোরআনের তফসীর করা শুরু করেন। ইসলামসম্মত নয় বলে স্থানীয় আলেম উলামাগণ এর সমালোচনা করেন এবং পরবর্তীতে সেই মাহফিল কমিটি বিতর্কিত সাঈদীকে আর কখনও আমন্ত্রণ জানানো হতে বিরত থাকে।

পিরোজপুরের এই মওলানার জীবনে বিতর্কের সূচনা আরো আগে থেকেই। শর্ষীনা মাদ্রাসায় পঞ্চম ক্লাসের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় জামায়াত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট থাকার সন্দেহে তাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয় বলে তারই এক সময়ের সহকর্মী মওলানা ইসহাক ওবায়েদী জানান। শর্ষীনা মাদ্রাসার পর তিনি খুলনার আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সে মাদ্রাসা থেকে তিনি কামেল (দাওরায়ে হাদীস) ডিগ্রী আদৌ লাভ করেছেন কি না এ নিয়ে দেশের আলেম সমাজেই প্রচুর সন্দেহ রয়েছে। দেশের শতাধিক আলেম এ বিষয়ের সত্যতা প্রমাণের জন্য সাঈদীর প্রতি একাধিকবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও সাঈদী কখনই সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি।

সাঈদীর ইসলাম শিক্ষার পরিপূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তার কন্ঠ চটুলতা এবং শ্রোতা আকর্ষণ ক্ষমতা বরাবরই দ্বিধাহীনভাবে স্বীকৃত। বিভিন্ন সূত্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে এই কন্ঠসম্পদকে অবলম্বন করে সাঈদী পিরোজপুরের গড়ের হাটে সুর করে আতর, তসবীহ ধর্মীয় পুস্তক বিক্রি করে জীবিক নির্বাহ করতেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তার বিরুদ্ধে লুটপাট ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মাসিক নিপুণ পত্রিকার জুলাই৮৭ সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাড়েরহাট ইউনিনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়- সাঈদী স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক-হানাদারবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় লিপ্ত ছিলেন। তিনি ধর্মের দোহাই দিয়ে গণিমতের মাল হিসেবে পাড়েরহাট বন্দরের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর লুট করেছেন। এবং মদন নামের এক হিন্দু ব্যবসায়ীর দোকানঘর ভেঙে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর সাঈদী দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকেন এবং দশ বছর পর নিজ গ্রামে আসেন।

স্বাধীনতার পর সাঈদীকে প্রকাশ্যে প্রথম চট্টগ্রামে দেখা যায় বলে স্থানীয় একজন আলেম জানান। এ সময় নির্মীয়মান একটি মসজিদের জন্য মাইক দিয়ে ভ্রাম্যমান অবস্থায় তিনি চাঁদা সংগ্রহ করতেন। তার সুরেলা কন্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গি জামায়াত সংশ্লিষ্ট অরাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদকে আকৃষ্ট করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সে সময়ে জামায়াতের সকল তৎপরতা অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে পরিচালনা করা হত। সমাজকল্যাণ পরিষদের ছদ্মাবরণে জামায়াত তাফসীর মাহফিলের আয়োজনের মাঝেই তাদের তৎপরতা সীমিত রাখতো। সমাজকল্যাণ পরিষদ আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে সাঈদীকে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধিতে ব্যবহার শুরু করে। আর এভাবেই জামায়াতের মাউথপিস হিসেবে সাঈদী এক পর্যায়ে জামায়াত বলছে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েন।

সাঈদী পরিচয় গোপন করেছিলেন

জামায়াতে ইসলামের সাংগঠনিক বিন্যাসের একটি পর্যায় হচ্ছে মজলিসে শুরায় অন্তর্ভূক্তি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহযোগী সদস্যকর্মী-রোকন পর্যায় পার হয়েই কেবল একজন মজলিসের সদস্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাঈদীর মজলিসে শুরায় অন্তর্ভূক্তি জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে তার দীর্ঘকালের সম্পর্কের কথাই প্রমাণ করে।

দুদিন আগে জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন সাঈদী অনেকদিন ধরেই জামায়াতের রাজনীতি করতেন। খিলগাঁও ইসলামী পাঠাগার সভাপতি আবুল কাসেম জানান, হাঁ ১০ বৎসর ধরেই জামায়াত করতেন।

অথচ এ প্রসঙ্গে সাঈদীর বক্তব্য এক জঘন্য মিথ্যাচারের পরিচায়ক। পাক্ষিক তারকালোকের ৪ বর্ষ ১৮ সংখ্যায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সাঈদী স্পষ্টভাবে বলেন আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই। যারা এ অভিযোগ করেন তাদের আরো মনোযোগ দিয়ে আমার বক্তব্য শুনতে অনুরোধ করব।

সাঈদীর এই মিথ্যাচার ইত্তেহাদুল উম্মাহ নামক একটি ধর্মীয় সংগঠন গড়াকালীন সময়েও দেখা যায়। ৮১ সনের শেষ দিকে বায়তুশ শরফের পীর সাহেবের খানকাতে এক গোপন বৈঠকের সঙ্গে সংগঠনটি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। সেই বৈঠকে বায়তুশ শরফের পীর, শর্ষীনার মেঝ হুজুর, যশোরের খাজা সাঈদী পীর, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও গোলাম আজম উপস্থিত ছিলেন।

সাঈদী কখনই একথা স্বীকার করেননি। এ সময় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রধান মওলানা হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে তার একটি কথোপকথনের বর্ণনা দিয়েছেন খেলাফত আন্দোলনেরই একটি সূত্র

সাঈদী : ইত্তেহাদুল উম্মাহর মধ্যে হুজুর আপনার জন্য চেয়ার খালি আছে।

হাফেজ্জী : এই কথাটি কালামে পাকের মধ্যে নেই। এসব রাজনীতি থেকে আপনি তওবা করুন।

সাঈদী : হুজুর আমি তো এসব করি না, আমি কেন তওবা করবো।

ইত্তেহাদুল উম্মাহ যে জামায়াতেরই একটি ছদ্মসংগঠন এটি বুঝতে পেরে হাফেজ্জী হুজুর এতে যোগ দেয়া হতে বিরত থাকেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে জামায়াত দেশের বরেণ্য ধর্মবেত্তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। জামায়াতের এই গোপন অভিলাষ এক সময় পরিষ্কার হয়ে উঠলে ইত্তেহাদুল উম্মাহর ভাঙন অনিবার্য হয়ে ওঠে। মোহমুক্ত মওলানারা সরে আসলে এক পর্যায়ে ইত্তেহাদুল উম্মাহ একটি নিষ্ক্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়।

বিচ্ছিন্ন মওলানারা পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে ১৯৮৬ সনে ইসলামী শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। চরমোনাইয়ের পীর বায়তুশ শরফের পীর ও মওলানা আবদুর রহিমের এই দলটিতে খেলাফতের মওলানা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী অংশ ও জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা যুব শিবিরের বাচ্চু গ্রুপও (বাচ্চুর রাজাকারের অনুসারী) প্রথম থেকেই অন্তর্ভূক্ত ছিল।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই দলটি গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে সাঈদী নিজেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন। মানিক মিয়া এভিনিউতে জামায়াতের একটি সম্মেলনে আব্বাস আলী খানের ইমামতি করার ঘটনায় মওলানা সাঈদী ও কামালউদ্দিন জাফরীর সঙ্গে এ সময়ে জামায়াতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আলেমদের উপস্থিতিতে একজন গায়েরে আলেমের ইমামতি সহজভাবে নেয়নি সাঈদীরা। এছাড়াও এ সময় বিভিন্ন ঘটনায় সাঈদীরা বুঝতে পারেন জামায়াত নেতৃত্বে ধর্মের চেয়ে রাজনীতির প্রশ্নটিই মুখ্য। ইসলামী শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একজন আলেম জানান, এসব কারণেই সাঈদী সম্ভবতঃ জামায়াতী তৎপরতার বলয় থেকে সরে আসার চেষ্টা করেন। ইসলামী শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাদের কাছে সাঈদী এ সময়ও বার বার জামায়াতের সঙ্গে তার কোনরকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন।

সাঈদীর এই মিথ্যাচারে আবারো বিভ্রান্ত হয় কিছু আলেম। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন সাঈদী। আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে চাঁদা আদায়ের কূপনে মওলানা ফজলুল, মওলানা মাদানী, মওলানা আবদুল জব্বারদের সঙ্গে সাঈদীরও দস্তখত ছিল। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রথম সম্মেলনে আহ্বায়ক কমিটিতেও সাঈদীর নাম ছিল। কিন্তু সম্মেলন আরম্ভ হওয়ার কিছুদিন আগে সাঈদী হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাঈদীর বিশ্বাসঘাতকতায় জামায়াত এ সময় সাঈদীকে শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে সাঈদীকে বেশ কিছুদিন অজ্ঞাতস্থানে বন্দী করেও রাখা হয় বলে একটি সূত্র জানায়।

অবশেষে সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে সাঈদীকে ওমরাহ হজ পালনের নামে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সৌদি আরব থেকে ফিরেই সাঈদী পত্রিকায় বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সঙ্গে তার পূর্বাপর কোন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। সাঈদীর এই অভাবিত বিশ্বাসঘাতকতা এবং মিথ্যাচারে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতারা। আন্দোলনের বাইরের আলেম সমাজও সাঈদীর এই ভূমিকাকে মেনে নিতে পারেননি।

এ সম্পর্কে খেলাফত আন্দোলনের মওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন খেলাফতের একটি অংশ বিচ্যূত হয়ে ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার ঘটনাটি হাফেজ্জীর জন্যে আঘাতস্বরূপ ছিল। তারপরও সাঈদীর এই আচরণ আমরা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য বা প্রশংসাযোগ্য মনে করি না। এটি একটি জঘন্য গাদ্দারী বা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

সাঈদীর ধর্মব্যবসা

এই মিথ্যাচার আর বিশ্বাসঘাতকতার স্বল্পোচ্চারিত অধ্যায় সাঈদীর ধর্মব্যবসার সুনিপূণ কৌশলে এক সময় ম্লান হয়ে আসতে থাকে। কথার মারপ্যাঁচ, কোরআন হাদিসের যথেচ্ছ ব্যাখ্যা, আর চটুল উপস্থাপনার মাধ্যমে তফসীর মাহফিলে সাঈদী নিজেকে ইসলামের সাচ্চা ধারক-বাহক রূপে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পান। এরই পাশাপাশি তফসীরের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থে ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে তার বিত্তের পাহাড়। যে সাঈদীকে ৭৬ সনের দিকে সহায় সম্বলহীন, দীন বেশে ঢাকায় প্রথম দেখেছিলেন কারী ওবায়েদুল্লাহরা, সেই সাঈদী একযুগের ব্যবধানে হয়ে ওঠেন প্রাসাদোপম এক অট্টালিকার মালিক। সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থাদিতে সুসজ্জিত সাঈদীর ৯১৪ নং শহীদবাগের চারতলা বাড়ির ভাড়াবাবদ আয়ই বর্তমানে ২০ হাজার টাকার মত।

এ সম্পর্কে মওলানা জালালাবাদী, মওলানা ইসহাক ওবায়েদী, মওলানা জাফরুল্লাহ খান, মওলানা ওবায়েদুল্লাহ সকলেই বলেন কোরআনের তফসীর করার বিনিময়ে অর্থগ্রহণ কোনক্রমেই ইসলামসম্মত নয়। নিতান্ত অভাবগ্রস্ত কোন আলেমকে তফসীরের লোকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে থাকা খাওয়া বা যাতায়াত খরচ বাবদ কিছু সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে দরকষাকষি করে অর্থগ্রহণের বিনিময়ে কোরআনের তফসীর সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এটি এক ধরনের হারাম বাণিজ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।

০০০

আমার রাহাখরচ বাবদ যা দেয়া হয় তা শরিয়ত সম্মত মওলানা সাঈদী

সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রতিনিধিকে মওলানা সাঈদী সরাসরি সাক্ষাৎকার প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে লিখিত প্রশ্ন দাবী করেন। নিম্নে লিখিত প্রশ্নমালার জবাব পত্রস্থ হলো :-

প্রশ্ন : আপনি কখন হতে জামায়াতে ইসলামের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হন। আপনি কি কখনো জামায়াতের সহযোগী সদস্য কর্মী বা রোকন পর্যায়ে ছিলেন। না থাকলে একবারে মসলিসে শুরার সদস্য হলেন কিভাবে?

উত্তর : আমি জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে শুরার সদস্য হয়েছি। প্রয়োজনে সে গঠনতন্ত্র অধ্যয়ন করে দেখতে পারেন।

প্রশ্ন : ৭১র স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আপনি কি করতেন? সে সময়ের জামায়াত রাজনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি? আপনি কি তা সমর্থন করেন?

উত্তর : ঐ সময়টা ছিল আমরা জ্ঞানপিপাসু মনের খোরাক হিসাবে ব্যাপক গবেষণা ও অধ্যয়নকাল। কুরআন হাদীস, তাফছীর ও আকায়েদ ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের বহু ধর্মগ্রন্থ এবং বিশ্বের বিভিন্ন মতপথ ও মতবাদের তুলনামূলক পর্যালোচনা ও গবেষণায় তখন আমি ব্যস্ত থাকি। যার কারণে কোন দলের ও পক্ষের কার্যক্রমে আমার বাস্তব অংশগ্রহণ তখন আর আমার হয়ে উঠেনি। তবে বাংলাদেশে যে শোষণ চলছিল সব সময় আমি তার বিরুদ্ধে ছিলাম। ঐ সময়কার জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রমের ব্যাখ্যা জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলন ও পুস্তিকায় প্রকাশ করেছে। আমি তা অযৌক্তিক মনে করি না।

প্রশ্ন : পিরোজপুরের একজন মুক্তিযোদ্ধা আপনার বিরুদ্ধে মাসিক নিপুন পত্রিকায় ৭১ সনে কিছু হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি লুটের অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগ মিথ্যে হলে আপনি পত্রিকায় প্রতিবাদলিপি পাঠান নি কেন?

উত্তর : ঐ সব অভিযোগ সর্সৈব মিথ্যা। তার জবাব সে সময় ও পরবর্তীকালে বিভিন্ন মাহফিলে আমি দিয়েছি।

প্রশ্ন : উপমহাদেশের বিভিন্ন আলেমগণ ইসলাম সম্পর্কে মওলানা মওদুদীর ব্যাখ্যাকে বিকৃত এবং অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। জামায়াতের রাজনীতি এই মওদুদীবাদকে ধারণ করেই অগ্রসর হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মওদুদীবাদ ও জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

উত্তর : কতিপয় আলেম মওলানা মওদুদীর কিছু অংশকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করলেও বিশ্বের অধিকাংশ বরেণ্য ও হক্কানী আলেম তার ব্যাখ্যাকে যথার্থ বলে গ্রহণ করে থাকেন। আমি তার মতামতকে ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক পেয়েছি। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক। এই দল বাংলাদেশে দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাজনীতি করে থাকে। উল্লেখ্য যে, মওদুদীবাদ বলতে কোন মতবাদ নেই। মওলানা মওদুদী ছিলেন এ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ও খাদেম।

প্রশ্ন : আপনি কত সনে কোন মাদ্রাসা হতে কামেল ডিগ্রী লাভ করেন? আপনার পেশাগত জীবন সম্পর্কে বলুন। বর্তমানে আপনার আয়ের উৎস কি?

উত্তর : আমি শর্ষিনা মাদ্রাসা হতে ১৯৬২ সনে ডিগ্রী লাভ করি তবে কোন ডিগ্রী লাভকে আমি জ্ঞানের চূড়ান্ত বলে মনে করি না। আমি এখনো আমার সময়ে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পড়াশুনা ও অধ্যয়নের কাজে ব্যয় করে থাকি। আল্লাহ আমাকে যা, কিছু জ্ঞান দান করেছেন আমার ঐ অধ্যয়ন অধ্যবসায়ের ফল