সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মুক্তির
মহানায়ক, স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের অমর কবি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। তিনি বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার
শেষ আশ্রয়স্থল। সংকটে তিনি পরিত্রাণদাত্রী। সংগ্রামে তিনি অবিচল আস্থার মূর্ত প্রতীক।
রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্র পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে অসাধারণ নেতৃত্ব তাকে
পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার নেতৃত্বের প্রশংসা এখন সর্বজনবিদিত।
বিশ্ব নেতৃত্ব আজ শেখ হাসিনাকে বলছেন বিশ্বের দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা। তাদের চোখে
শেখ হাসিনা উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান আর বেস্ট ক্রাইসিস ম্যানেজার। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন
তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি একজন মানবিক রাষ্ট্রনায়কও বটে।
একটি রাষ্ট্র কত দূর এগিয়ে যাবে, কোথায়
গিয়ে পৌঁছাবে, সেটা কী রাজনীতিতে, কী সমাজনীতিতে, কী অর্থনীতিতে, সেটা নির্ভর করে একজন
রাষ্ট্র নায়কের নেতৃত্বের ওপর। শোষণ ও বঞ্চনার অবসান এবং অর্থনৈতিক মুক্তির অভিপ্রায়ে
সৃষ্ট বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের দূরদর্শী ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা । তিনি উন্নতসমৃদ্ধ
বাংলাদেশ বিনির্মাণে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা করেছিল।
ওই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও
দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার স্বপ্ন ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করা হয়েছিল।
এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, কারণ ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ পেয়েছে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল
দেশে উত্তরণের মর্যাদা। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চূড়ান্ত
সুপারিশ জাতিসংঘ অনুমোদন করেছে। এ সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন
সরকারের। শুধু এখানেই থেমে যাননি ভিশনারী লিডার শেখ হাসিনা। ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত
প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ২০২৫ সালে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন,
২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নতসমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠা এবং ২১০০ সালের মধ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে
যাচ্ছেন অদম্য প্রত্যয়ী নেতা শেখ হাসিনা। এ রকম দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক বিশ্বে বিরল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
শোষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক মুক্তির
লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। জাতির পিতা যখন
সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিমগ্ন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম
হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান জাতির পিতার
জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলার
সুযোগ পাননি। পিতার সেই অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন
সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। কিন্তু জাতির জনকের কন্যার পথচলা মোটেই সুখকর ছিল না।
জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ছয় বছর ছোট বোন শেখ রেহানা,
স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া, পুত্র জয় ও কন্যা পুতুলকে নিয়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটাতে হয়েছে
বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। বাবা-মা, ছোট ভাই শেখ কামাল-শেখ জামাল, আদরের ছোট্ট রাসেল আর আত্মীয়-পরিজন
হারিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণা আর অবর্ণনীয় কষ্ট বুকে চেপে একরকম বন্দি প্রবাস জীবনে থেকেও
তিনি ভেবেছেন বাংলার মানুষের কল্যাণের কথা, তাদের অধিকারের কথা।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার,
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে
জনগণের হৃত গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার
বজ্র শপথে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। সে বছর বিখ্যাত
‘নিউজউইক’ পত্রিকায় বিশেষ
গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা
দখলকালে নিহত পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত
করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও জনগণের জন্য দেশে ফিরতে
ব্যাকুল ছিলেন। শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘যেসব কাজ অগ্রাধিকার
পাওয়ার যোগ্য বলে আমি বিবেচনা করি তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পূর্ণ
গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি বাংলাদেশের জনগণের
প্রীতি ও ভালোবাসা ছিল অপরিমিত। আমাকে (আওয়ামী লীগের) সভানেত্রী নির্বাচিত করে পরোক্ষভাবে
তাঁকেই সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি তাঁর অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারব।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলার জনগণের মুক্তিদূত
শেখ হাসিনা তৎকালীন সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু, জনকের খুনিদের আস্ফালন ও সব ষড়যন্ত্রের
জাল ছিন্ন করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত
হয়েছিল ঢাকার আকাশ বাতাস। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ ধ্বনিতে মুখরিত
হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। লাখো জনতার ভালোবাসা আর সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন
বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত
পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন
উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি
আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর
নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি
জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বৈরী রাজনৈতিক
পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। ’৭৫ এর পর সামরিক শাসক আর স্বাধীনতাবিরোধীরা
রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের দাম্ভিকতা
ও আস্ফালনে কলঙ্কিত হয়েছিল বাংলার আকাশ-বাতাস। এ সময় বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা মুছে ফেলার সব ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ক্ষমতা ও নেতৃত্বের কোন্দলে বহুভাগে বিভাজিত
হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ছাত্রনেতারা
হুলিয়া মাথায় নিয়ে পলাতক, জনগণকে মিথ্যার বেসাতি দিয়ে বিভ্রান্তির নাগপাশে আবদ্ধ করে
রেখেছে সেনাশাসকেরা। একাধিক সামরিক ক্যু আর নির্বাচনের নামে প্রহসন চলে দেশে।
১৯৮২ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ
এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সফল নেতৃত্বের একক নেতা হিসেবে
আবির্ভূত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলন-সংগ্রাম, ছোট-বড় দলের সঙ্গে জোট গঠন, বৃহত্তম
বাইশ দলের প্লাটফর্ম, রাজনীতির কৌশলে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে যান তিনি।
আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে সুসংবদ্ধ করার কাজটিও সমানতালে করে যান বঙ্গবন্ধু
কন্যা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দলটি যেখানে বড় বড় নেতার নেতৃত্বে বহুভাগে বিভক্ত হয়ে
পড়েছিল, সে জায়গা থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, সুসংগঠিত করা খুব সহজ কাজ ছিল না। ১৯৯০-এ
এরশাদের পতন হলেও পরের বছর নির্বাচনে গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত
করা হয়।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকার
বিরোধীদলহীন প্রহসনের নির্বাচন করে। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক
দেন এবং ১৯৯৬ সালে ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয়ী হন।
প্রায় ২১ বছর রাজপথে থাকা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে আসেন
বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা
করেন। তার নেতৃত্বে পথ হারানো বাংলাদেশ অবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি ঐক্যজোট ও নাজিউরের জাতীয় পার্টির সমন্বয়ে
চারদলীয় জোট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আস। চারদলীয় জোট ছিল মূলত স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক
গোষ্ঠীর প্লাটফর্ম। ফলে শেখ হাসিনাকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে অনেক সতর্ক ও হিসাব-নিকেশ
এগোতে হয়। চার দলের অপশাসনের তাণ্ডবে দেশের মানুষ দিশেহারা, কর্মী-সমর্থকেরা ঘরছাড়া
হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধীদের
ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন।
এর মধ্যেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু
এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার জনসভায় তৎকালীন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সরাসরি
পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা করে তাঁকে হত্যা চেষ্টা হয়। তবে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাকে
তিনি পরোয়া করেননি। সব হুমকি-ভীতি উপেক্ষা করে চারদলীয় জোট সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে
আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এরই মধ্যে এক/এগারোর সরকার প্রতিষ্ঠা পায় এবং শেখ হাসিনাকে
আবার সংগ্রামের ধারা আবার পাল্টাতে হয়। যাঁর পিতা গণতন্ত্রের অগ্রনায়ক, জনগণের মুক্তির
দিশারী, সাম্যের পথিকৃৎ, সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষাকারী, তিনি জনগণের অধিকার
আদায়ের সংগ্রামে পিছপা হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। গ্রেফতার হোন শেখ হাসিনা। গ্রেফতার
হলেও দমে যাননি শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশ মতো সরকারবিরোধী আন্দোলন চলে। কিন্তু কারাগারে
অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আন্দোলনের তীব্রতা ও আন্তর্জাতিক চাপে তৎকালীন সরকার বাধ্য হয়
শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে। চিকিৎসার জন্য তিনি ইংল্যান্ড যান। সে সময় সরকার শেখ হাসিনাকে
দেশে ফিরতে দেবে না, দেশে ফিরলেই তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হবে এমন শঙ্কায়ও শেখ হাসিনা
ভয় পাননি বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি। তিনি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এর আগেও যেমন জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, এবারও চিকিৎসা নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি দেশের
মাটিতে ফিরে আসেন। তিনি ফিরে আসার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাতো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের ছোট-বড় সব শক্তি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রধান শক্তিগুলোকে এক
প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন তিনি।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে
তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে ২৩০টি লাভ করে। শেখ হাসিনার অকুতোভয়
সংগ্রামী নেতৃত্বের কারণেই সেদিন গণতন্ত্রের এ বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল। এরপর তাঁর
নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা সরকার গঠনে বারবার দূরদর্শিতার পরিচয় দেন।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে তিনি আওয়ামী লীগের সরকার নাম না দিয়ে নাম দেন ‘জাতীয় ঐকমত্যের
সরকার’। এরপর ২০০৯ সালে
দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে গঠন করেন ‘মহাজোট সরকার’।
দীর্ঘ চার দশক ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল
আওয়ামী লীগের এবং প্রায় ১৯ বছর সরকারের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে। এ সময়ের মধ্যে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার,
যুদ্ধাপরাধের বিচার, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট
উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে
পদ্মা সেতু নির্মাণ ও চালু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী
নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ, মহাসড়ক
চার লেনে উন্নীতকরণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রেকর্ড
পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের
হার হ্রাস, গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত করা, বিদ্যুতের উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে
উন্নীত করা ও প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক
৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে
দেওয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপন ও চিকৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ,
নারীনীতি প্রণয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব
সাধন, ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ঘর প্রদান, দুস্থ ও অসহায়দের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর
আওতায় আনা, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে
ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা, দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের
এরকম অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার অর্জন রীতিমতো বিস্ময়কর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বড় বড় সংস্থা থেকে তিনি
পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি। শান্তির প্রচার, অনুসন্ধান ও সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কো থেকে পেয়েছেন
‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার।
অর্জন করেছেন ‘মেডেল অব ডিস্টিনকশন’ ও ‘হেড অব স্টেট’ পদক। বিশ্ব শান্তির
দূত হিসেবে সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে পেয়েছেন ‘মাদার তেরেইজা
পুরস্কার’। জলবায়ু পরিবর্তনের
বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী ভূমিকার জন্য বিশ্বের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি
‘চ্যাম্পিয়নস অব
দ্য আর্থ’ অর্জন করেছেন।
খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতি তাঁকে এনে দিয়েছে ‘দ্য সিরিস মেডেল’। মিয়ানমারের
বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভূষিত হয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মানে। অর্জন
করেছেন জাতিসংঘের ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’। নারী রাজনীতিবিদদের
বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করেছে
‘রিজিওনাল লিডারশীপ’ অ্যাওয়ার্ডে।
নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারে অবদানের স্বীকৃতি ‘পিস ট্রি’ অ্যাওয়ার্ড,
শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের
স্বীকৃতি সাউথ-সাউথ পুরস্কার, নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউএন উইমেন প্রদত্ত
‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০
চ্যাম্পিয়ন’ অ্যাওয়ার্ড রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অর্জনের মুকুটে
এক একটি জ্বলজ্বলে পালক। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও
অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘স্টেট ম্যান’। বিশ্ব নেতৃত্ব
শেখ হাসিনাকে বলেছেন ‘স্টার অব ইস্ট’। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল
ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক তাঁকে ‘এসডিজি অগ্রগতি
পুরস্কার’ প্রদান করে ‘মুকুট মণি’ অভিধায় ভূষিত
করেছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের সোচ্চার কণ্ঠস্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাকে বিবিসি বলেছে ‘The voice of the Vulnerable’। এ সবই দূরদর্শী
নেতা ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি। এখানেই একজন শেখ হাসিনা
অনন্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
বাংলাদেশে এখনও শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব
তৈরি হয়নি। তিনি জাতির পিতার রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, নেতৃত্বের
সৌকর্যে, দল ও দেশ পরিচালনায় আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও পরিপক্বতায় তার ধারে কাছে কেউ নেই।
ন্যায়-নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি অবিচল। তিনি সততার মূর্ত প্রতীক, সংগ্রামে তিনি
আপসহীন, অধিকার আদায়ে তিনি বজ্রকণ্ঠ, দেশপ্রেমে তিনি অনন্য। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা
সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাঙালি জাতির জন্য আশীর্বাদ। তাঁর বিকল্প তিনি নিজেই।
তিনি ফিরে না এলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতো না। তিনি ফিরে না এলে
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতির পিতার হত্যার বিচার হতো না, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা
হতো না। তিনি ফিরে না এলে নিকষ কালো অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আলোর পথে ফিরে আসত না। তিনি
ফিরে না এলে এ দেশ পরিচিত হতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মডেল দেশ হিসেবে। তিনি ফিরে না এলে
একসময় সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতো
না। তিনি ফিরে না এলে জাতির পিতার হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কলঙ্ক থেকে জাতিকে
মুক্তি করা সম্ভব হতো না। যুদ্ধাপরাধীদের ভ্রুকুটি আর আস্ফালনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান
মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ, সেটি বন্ধ করা যেতো না। তাই এ দেশের প্রতিটি
মানুষের জন্য, এ জাতির কল্যাণের জন্য, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গৌরবজ্জ্বল পথচলার
জন্য মানচিত্রের জন্য উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে এবং বাংলাদেশের
সরকার পরিচালনায় তিনি এখনও অপরিহার্য। এমনকি বিশ্ব ফোরামেও তার নেতৃত্ব অপরিহার্য।
লেখক: শ ম রেজাউল করিম এমপি, মন্ত্রী,
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।