বিহিত পূজা-অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি ও আরতিসহ নানা আয়োজনে মঙ্গলবার সনাতন ধর্মালম্বীরা পালন করবে মহানবমী। অনেকের বিশ্বাস মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এই দিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এই দিনই দুর্গাপুজার অন্তিম দিন। পরের দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব।
বুধবার বিজয়া দশমীতে সকালে হবে দর্পণ বিসর্জন। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা। শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী ও অন্যতম আকর্ষণ কুমারীপূজা সোমবার মহাসমারোহে উদযাপিত হয়েছে।
সকালে দুর্গা
দেবীর মহাষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্তা, ব্রতোপবাস ও পরে পুষ্পাঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকের
বোল, উলুধ্বনি, শঙ্খ এবং কাঁসরের তালে তালে পূজার আচার সম্পন্ন হয়। কৃপা লাভের আশায়
দেবী দুর্গার উদ্দেশে পুষ্পাঞ্জলি দেন ভক্তরা। বিকেলে হয় সন্ধিপূজা।
করোনাভাইরাস
মহামারীর দরুন গত দুই বছর রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে মহাষ্টমীতে কুমারীপূজা
হয়নি। এবার উৎসবমুখর পরিবেশে কুমারীপূজা হয়েছে। কুমারী বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ
কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা।
এ পূজার বিষয়ে
শ্রী রামকৃষ্ণের কথামৃতে বলা হয়েছে, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায়
এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারীপূজার উদ্দেশ্য।
হিন্দুশাস্ত্র
অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত
কুমারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করার বিধান রয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে নির্বাচিত কুমারীকে
মহাষ্টমীর দিন প্রভাতে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। কপালে সিঁদুর ও পায়ে আলতা দিয়ে
হাতে দেওয়া হয় ফুল। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে (ষোলটি উপাদান) মন্ত্রপাঠে
মাতৃবন্দনা করা হয়। এ সময় চারদিকে শঙ্খ, ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখরিত
হয়ে ওঠে। এবার রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে ছয় বছর বয়সী দেবদৃতা চক্রবর্তীকে দেবী রূপে বন্দনা
করা হয়। তার শাস্ত্রীয় নাম দেওয়া হয় ‘উমা’।
সোমবার মহাষ্টমীর
দিনে মন্ডপগুলোতে নতুন পোশাকে পূজারি ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল অন্য দুদিনের চেয়ে বেশি।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ পূজা
উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, “সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা
উদযাপিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আশা
করি বাকি কয়েক দিন এ উৎসবের পরিবেশ অব্যাহত থাকবে। নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব সম্পন্ন হবে।”
ঢাকা ছাড়াও
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, ফরিদপুরসহ সারা দেশে সোমবার সাড়ম্বরে কুমারীপূজা উদযাপন
করা হয়। গত শনিবার ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় (বিল্ববৃক্ষ) পূজার পর দেবী দুর্গার বোধন,
আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হয়।