Logo
শিরোনাম

ত্রিপুরায় রাবার চাষে আগ্রহ কমছে

প্রকাশিত:সোমবার ২০ ফেব্রুয়ারী ২০23 | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৪ নভেম্বর ২০২৩ | ৬১০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

একসময় যে রাবার চাষের জন্য ত্রিপুরার খ্যাতি ছিল গোটা ভারতজুড়ে, সেই রাজ্যটিতেই আজ দুর্দশার ঘনঘটা। জীবিকার তাগিদে রাবার ছেড়ে এখন অন্য ফসলে মন দিতে হচ্ছে চাষিদের। ত্রিপুরায় রাবার চাষের এই দৃশ্যপট যে এত দ্রুত বদলে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বেশিরভাগ চাষি। মূলত দিনের পর দিন রাবারের দাম কমতে থাকায় এর প্রতি আর কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছেন না চাষিরা।

একসময় রাবার উৎপাদনে দক্ষিণ ভারতের কেরালার পরেই নামডাক ছিল ত্রিপুরার। রাজ্যটির মোট রাবার উৎপাদনের প্রায় অর্ধেকই হতো দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায়। তথ্য বলছে, ভারতজুড়ে রাবার উৎপাদনের ৯০ শতাংশ হয় কেরালায়। এরপর নয় শতাংশ রাবার উৎপাদিত হয় উত্তর-পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্যে। বিশেষ করে, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায়।

কিন্তু প্রায় তিন বছর যাবৎ ক্রমাগত দাম কমতে থাকায় এখন আর রাবার চাষকে লাভজনক মনে করছেন না চাষিরা। পরিবর্তে ধান, গমের মতো অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তারা। চাষিদের বক্তব্য, গত তিন বছরে রাবারের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু শ্রমিক কিংবা আনুষঙ্গিক খরচাপাতির মাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। দক্ষিণ ত্রিপুরার মির্জা এলাকায় রাবার চাষের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, আগে নার্সারি, বাগান করা থেকে শুরু করে ট্যাপিংয়ের জন্য যেসব শ্রমিক নিয়োজিত করা হতো, তাদের মজুরি ছিল এক থেকে দেড়শ রুপির কাছাকাছি। কিন্তু তিন বছরের ব্যবধানে এখন মজুরি দিতে হয় সর্বনিম্ন ৩০০ রুপি। অথচ ল্যাটেক্স বিক্রি করে সেই খরচ তোলা যাচ্ছে না।

বর্তমানে ত্রিপুরার বাজারে এক কেজি ল্যাটেক্সের দাম ১৩০ রুপির কাছাকাছি। তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খরচাপাতির পর নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা হয়ে যাচ্ছে রাবার চাষিদের। চাহিদা মতো মজুরি দিতে না পারায় মিলছে না শ্রমিকও। এ অবস্থায় রাবার চাষের আগ্রহ ফিকে হয়ে আসছে।

কী করছেন রাবার চাষিরা: জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মির্জা বাজারের কাছাকাছি ২৫ একরেরও বেশি এলাকাজুড়ে রাবার বাগান রয়েছে দুলাল দাশের। দীর্ঘদিন রাবার চাষই ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস। সেই দুলালও রাবার চাষকে লাভজনক ভাবছেন না আর। তিনি বলেন, ছোটখাটো রাবার বাগানের মালিকরা এখন আর তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না রাবার চাষে। দেশে রাবারের দাম অনেকটাই নিচের নেমে যাওয়ায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দাম না বাড়লে মানুষ খুব শিগগির আরও আগ্রহ হারাবে বলে নিশ্চিত এই রাবার চাষি।

মির্জা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে শামুকছড়া গ্রাম। শীতের শেষে বসন্ত শুরু হতেই এ এলাকায় রাবার চাষের সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ মানুষ নিজ নিজ জমিতে অন্য ফসল ফলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রায় প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে একে অপরের জমিতে ধানের চারা রোপণ করছেন তারা।

বোরো চাষে যুক্ত সুনিতী রিয়াং, পিয়ালী দাশ, সবিতা দাশ, অর্চনা ঘোষ নামে চার নারী চাষি জানান, নবীন ধানের চারা রোপণ করে আমরা প্রত্যেকেই ৪০০ রুপি করে মজুরি পাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে, আমরা একে অপরের চাষযোগ্য জমিতে পর্যায়ক্রমে চারা রোপণ করি। রাবার চাষের তুলনায় এখন ধানের চারা রোপণ কিংবা অন্যান্য ফসল ফলানোর কাজেই বেশি লাভ। তারা বলেন, আমরাই একসময় রাবার চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু পর্যাপ্ত মজুরি না পাওয়ায় অন্য কাচে মনযোগ দিতে হলো। চাষিদের যুক্তি, রাজ্যের বেশিরভাগ বাজারগুলোতে এখন শাকসবজির দাম আকাশছোঁয়া। তাই সুযোগমতো আমরা সবজিও চাষ করি। সন্ধ্যার পরে এই এলাকার বেশিরভাগ চাষি বিভিন্ন বাজারে সবজি নিয়ে বসেন। এতে সবারই আয় রোজগার ভালো হচ্ছে।

নিউজ ট্যাগ: রাবার চাষ

আরও খবর

রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন এরদোয়ান

মঙ্গলবার ২৯ আগস্ট ২০২৩