Logo
শিরোনাম

শুঁটকি মাছে হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা

প্রকাশিত:বুধবার ১১ মে ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৯৪৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বাংলাদেশে তো বটেই বিদেশে বাংলাদেশের শুঁটকি মাছের একটি ভাল বাজার তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী শুঁটকি মাছ পছন্দ করে। দেশের প্রায় সর্বত্র শুঁটকি মাছ বিক্রয় হয়। বিদেশে অভিবাসী হিসেবে যারা আছেন বিদেশের মাটিতে দেশের শুঁটকি মাছ পেলে তারা ক্রয় করছেন। এভাবে বিদেশে বাংলাদেশের শুঁটকি মাছের একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে শুঁটকি তৈরি হয় দশ হতে ১২ হাজার টন। যার অধিকাংশ প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ রৌদ্রে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। বর্তমানে বেশকিছু স্থানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতমানের শুঁটকি তৈরি করে বাজারজাত ও রফতানি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বছর কমবেশি ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ বিদেশে রফতানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রফতানিকারকদের অভিমত, এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে বিদেশে শুঁটকি মাছ রফতানি করে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। আশার খবর হলো- শুঁটকি এখন শুধু সুস্বাদু খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না দেশের পোলট্রি এবং মৎস্য খামারে শুঁটকি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শুঁটকির মান বৈজ্ঞানিক উপায়ে উৎপাদিত শুঁটকির তুলনায় নিম্নমানের। ভোজন রসিকদের অতিপ্রিয় এবং সুস্বাদু এসব শুঁটকি অতি উচ্চমূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। জানা যায়, তিন কেজি তাজা মাছ শুঁকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। প্রকার ভেদে শুঁটকির বাজারমূল্য ৩০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়।

শুঁটকির কারখানা : বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে শুঁটকি তৈরি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টন। এর অধিকাংশ প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ রৌদ্রে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকি তৈরিতে ১৬টি কারখানা ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে যেখানে রৌদ্রের পরিবর্তে বিদ্যুতের তাপে মাছ শুকানো হয়। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সারা বছর সমুদ্র থেকে মাছ ধরা হলেও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। আমাদের দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা কক্সবাজারের লুনিয়াছাটা ও নাজিরারটেকে বর্তমানে ২০ এর অধিক রফতানিমুখী শুঁটকির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় শুঁটকি ডিহাইড্রেড করে রফতানি উপযোগী করা হয়। কক্সবাজার সাগর পাড়ে নাজিরাটেকে স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি মহালে মৌসুমে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি শুঁটকি উৎপাদন করা হয় বলে জানা গেছে।

লাখো মানুষের কর্মসংস্থান : সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার লোকদের অন্যতম পেশা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে শুঁটকি উৎপন্ন করা। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার প্রায় ১০ লাখ লোক শুঁটকি উৎপাদন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। কক্সবাজার সাগর পাড়ের নাজিরাটেকে স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি মহালে কমপক্ষে ১০-১২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। আশুগঞ্জের লালপুরে শুঁটকি শিল্পের সঙ্গে ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক জড়িত রয়েছেন। এভাবে সারাদেশে শুঁটকি তৈরি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে লাখো নারী পুরুষের কর্মসংস্থান জড়িত।

শুঁটকি রফতানি- হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা : আশার খবর হলো, প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিশাল পরিমাণে শুঁটকি রফতানি হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, ব্রিটেন, আমেরিকা, চীন, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। জাপান, চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়াসহ ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ এবং আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশেও শুকনো মাছ বা শুঁটকির জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেসব দেশেও বাংলাদেশের শুঁটকি রফতানি সম্প্রসারিত হতে পারে। জানা গেছে, স্বাধীনতার (১৯৭২-১৯৭৩) পর শুঁটকি রফতানি খাতে সরকারের আয় হয়েছে ১৭ হাজার ৯শ টাকা। ১৯৮৫-৮৬ সালে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা, ১৯৯০-৯১ অর্থ সালে ২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে শুঁটকি মাছে রফতানি আয় হয় ৬১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এভাবে ক্রমান্বয়ে গত ২০১১-২০১২ অর্থবছরে এই শুঁটকি মহাল থেকে মাছ রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৮০ কোটি টাকার উপরে। যা বর্তমানে ১০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল। বাংলাদেশ ডিহাইড্রেশন সীফুডস রফতানিকারক সমিতি সূত্রে, বর্তমানে প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ বিদেশে রফতানি হয়। রফতানিকারকদের মতে, সরকার এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে বিদেশে শুঁটকি মাছ রফতানি করে বছরে ১০০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

আশার চরে ১৫০ কোটি টাকার শুঁটকি : বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার তালতলী থানাধীন বড়বগী ইউনিয়নে বঙ্গোপসাগরের কূল ছুঁয়ে জেগে ওঠা আশার চরে সাড়ে ৩ হাজার একর আয়তনে শুঁটকি আর শুঁটকি। শুঁটকির এই বিশাল সাম্রাজ্যে নাকি কমবেশি ২৮০০ টন শুঁটকি উৎপন্ন হয় যার মূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

চলনবিলের শুঁটকি : উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ভাণ্ডা খ্যাত চলনবিলের দেশী মাছকে কেন্দ্র করে চলনবিলে গড়ে উঠেছে ২৫০টি অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল। চলনবিলে প্রায় এক হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি বিল, চার হাজার ২৮৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ১৬টি নদী এবং ১২০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ২২টি খাল ছাড়াও অসংখ্য পুকুর রয়েছে। এখানে দুই সহস্রাধিক পরিবার মৌসুমি শুঁটকি তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

হাওড়ে বিষমুক্ত শুঁটকি : হবিগঞ্জের হাওড়ে যুগ যুগ ধরে মৎস্যজীবীরা মাছ আহরণ করে বিক্রি ও অবশিষ্ট মাছ দিয়ে তৈরি করছে শুঁটকি। হাওড়ের জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে নানা প্রজাতির প্রচুর মাছ জন্ম নেয়। বছরের কার্তিক থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত মাছ অবশিষ্ট বাছাই করে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এর পাশাপাশি মাছ প্রস্তুত করে মাটির পাত্র মাটিতে পুঁতে রাখা হয় সিদল/চ্যাপা তৈরির জন্য। এখানকার শুঁটকি ও সিদল আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি হলে ব্যাপকভাবে বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।

চট্টগ্রামের শুঁটকির সুখ্যাতি : নগরীর বাকলিয়া এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে (কর্ণফুলী সেতু এলাকা) ৯১ সালের আগে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী এখানে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি শুরু করেন। বর্তমানে শতাধিক মাচানে শুঁটকি তৈরি চলছে। প্রতি সপ্তাহে শতাধিক টন শুঁটকি নগরীর পাইকারি বাজার আছাদগঞ্জে সরবরাহ করা হয়। প্রতি মৌসুমে অন্তত ৮ কোটি টাকার শুঁটকি কর্ণফুলী তীর থেকে সরবরাহ করা হয়। এই শুঁটকি এখন শুধু চট্টগ্রামের নয়, এর সুখ্যাতি দেশের নানা প্রান্ত ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বাঁশখালীর সুস্বাদু শুটকি : বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, পুঁইছড়ি, নাপোড়া, শেখেরখীল ফাঁড়ির মুখ, মনকিচর, সরল, বাহারছড়া ও খানখানাবাদের নদী চরগুলোতে জেলেরা শুঁটকি শুকায়। বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূলের জেলেরা কোন কিছু মিশ্রণ ছাড়া প্রহর রৌদ্রের তাপে শুঁটকি মাছ শুকায় বলেই বাঁশখালীর শুঁটকি খুবই সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়। বাঁশখালীর জেলে পল্লীগুলোতে শুকানো শত শত মন শুঁটকি ক্রয় করতে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারের গুদাম মালিকরা।

আশুগঞ্জের শুঁটকি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরে গড়ে উঠেছে শুঁটকি পল্লী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরে মেঘনা নদীর তীরে গড়ে ওঠা শতাধিক ডাঙ্গি বা মাচার ওপর শুঁকিয়ে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এসব শুঁটকি তৈরি করা হয়।

অপ্রচলিত পণ্যের সম্ভাবনা : শুঁটকি মাছ একটি অপ্রচলিত পণ্য। সরকারের উচিত শুঁটকি পণ্যের মজবুত অবকাঠামো তৈরি করা যাতে বেশি পরিমাণ শুঁটকি রফতানি হয়। এজন্য প্রথম প্রয়োজন স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা। দাদন ব্যবসায়ীদের কবল থেকে জেলেদের মুক্ত করা। শুঁটকি প্রস্তুত এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ দেয়া। শুঁটকি মাছ রফতানির ওপর শুল্ক কমানো।

নিউজ ট্যাগ: শুঁটকি মাছ

আরও খবর

শখের নার্সারিতে সফল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মনির

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

জয়পুরহাটে ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩