Logo
শিরোনাম

রায়পুরায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত:রবিবার ০৩ এপ্রিল ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১২ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৬৫জন দেখেছেন
Image

নরসিংদী প্রতিনিধি:

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি বিস্তীর্ণ চর জুড়ে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই কেবল দিগন্ত জোড়া সবুজ-হলুদ সংমিশ্রণে চৈত্রের বাহারী মৌসুমি ফল বাঙ্গি চাষের সমারোহ দেখা যায়। বাঙ্গির বাম্পার ফলন হওয়ায় ভালো দামে বিক্রি করতে পারায় উপজেলার বাঁশগাড়ির চান্দেরকান্দি এলাকার কৃষকদের মুখে বইছে হাসির ঝলক। উৎপাদিত ফসল নিয়ে আশায় বুক বাধছেন স্থানীয় কৃষকরা। কম পুঁজিতে ভালো মুনাফা ও প্রচুর ফলন পাওয়ায় প্রতি বছরই এ এলাকার মানুষ বাঙ্গি চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। রমজান শুরর আগেই বাঙ্গির পাপকারী দর প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা যা খুচরা বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।

বাঙ্গি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তীব্র গরমে শরীরকে ঠাা রাখতে বাঙ্গি তরমুজের পরের তালিকাতেই ধরা যায়। তীব্র গরমে রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তির ছাপ মুছতে বেশিরভাগই বাঙালির ইফতারেই বাঙ্গির চাহিদা থাকে।

সরজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি এলাকার বেশিরভাগই মানুষই মৌসুমি এই কৃষিপণ্য বাঙ্গির চাষ করে থাকেন। বাঙ্গিগুলো বাজারজাত করণের জন্য প্রতিদিনই কৃষকদের কাছে নরসিংদী জেলাসহ পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতাদের বাঙ্গি ক্রয় করতে দেখা গেছে। প্রত্যেক পাইকারি ব্যবসায়ীরাই তাদের সাধ্যমতো বাঙ্গি ক্রয় করে বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করে।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এটি অন্যান্য সবজি বা ফসলের চেয়ে চাষের তুলনায় আয় বেশি তাই অধিকাংশ চাষিরাই বাঙ্গি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার এখনো পর্যন্ত বাঙ্গির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি দরে বাঙ্গিগুলো প্রতি ১০০ পিস ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা প্রতি পিস পাইকারি মূল্যে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পরে।

স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া জানান, তিনি গত টানা ৪ বছর যাবত বাঙ্গির চাষ করে আসছেন। এবার তিনি ৩৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এবার বাঙ্গি চাষে তার ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে তার জমির সকল ফসল বিক্রি করতে পারলে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মতো লাভবান হতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, গেলো বছর একই জমিতে তিনি ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করে বাঙ্গির চাষ করে তা ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এতে তার ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এবার তিনি গতবারের বাজার মূল্য থেকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।

পাইকারি ক্রেতা মোরশেদ মিয়া জানান, আমরা এবছর প্রতি ১০০ পিস বাঙ্গি ৭ হাজার টাকায় কৃষকের জমি থেকে ক্রয় করেছি। জমি থেকে ক্রয় করার পর এগুলো বাজারে নেওয়ার আগে মজুরি ও গাড়ি ভাড়া সহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে প্রতি পিসে সর্ব্বোচ ৫ টাকা লাভ থাকলেই বিক্রি করে দিই।

বিভিন্ন পাইকারি ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাইকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের জমি থেকে বাঙ্গি ক্রয় করে এগুলো নরসিংদী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা, উপজেলার বাজার ও আশেপাশের অন্যান্য হাট বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে। এতে তাদের প্রতি বাঙ্গিতে সব মিলিয়ে ৫ টাকা লাভ হলেই সন্তুষ্ট তারা।

রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৭শ মেট্রিক টন বাঙ্গি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলটিতে শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় বাজারেও বাঙ্গির ভালো চাহিদা রয়েছে। এছাড়া কম সুগার থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

এ ছাড়াও রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে এখনো পর্যন্ত বাঙ্গির জমজমাট হাট না বসলেও কিছু কিছু বাঙ্গি বিক্রেতা চোখে পড়ছে। এগুলো তারা খুচরা দেড়’শ থেকে দুই’শ টাকা মূল্যে বিক্রি করছেন।


আরও খবর