Logo
শিরোনাম

অসময়ে তরমুজ চাষে সফল নড়াইলের চাষিরা

প্রকাশিত:সোমবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ১০২৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

অসময়ে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাষিরা। কম খরচে বেশি ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন তারা। এসব চাষিদের সফলতা দেখে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। বিশেষ হাইব্রিড থাই জাতের তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ, বিনা মূল্যে সার, বীজ, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানায় কৃষি বিভাগ।

কৃষি অফিস ও চাষি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে কালিয়া উপজেলায় সাত হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ১৫ টন। কালিয়ার পৌরসভার ছোট কালিয়ার গোবিন্দ নগর এলাকার বিলে, সালামাবাদ ইউনিয়নের ভাউরীর চরে আর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ভক্তডাঙ্গা বিলের অসংখ্য মৎস্যঘেরের পাড়ে মাচায় মাচায় চাষ হয়েছে বিশেষ জাতের বারোমাসী তরমুজ এশিয়ান-২, কানিয়া, মধু মেলা ও ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ। এরই মধ্যে এগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এদের মধ্যে এশিয়ান-২ বাংলাদেশি জাত। যা ওজনে প্রায় ৮ থেকে ৯ কেজি হয়। এছাড়া মধু মেলা জাতের তরমুজের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরের অংশের রঙ লাল, কানিয়া জাতের তরমুজের বাইরের অংশ ডোরাকাটা সবুজ আর ভেতরের অংশের রঙ হলুদ।

এসব জাতের তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ সুস্বাদু। বিশেষ করে কানিয়া জাতের তরমুজ বেশি সুস্বাদু। এসব তরমুজ চাষে খরচ কম। একর প্রতি মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় কৃষক খুশি। অসময়ে তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

অসময়ে তরমুজ চাষে সফল একজন শিক্ষিত তরমুজ চাষি জেলার নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কালিয়া উপজেলার ভাউরীর চরের বাসিন্দা শেখ কামাল হোসেন। বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর সে অনুযায়ী গত বছর গাছ বাড়িয়া বিলের ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে প্রথমবার প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ২০০টি গাছ রোপণ করে মাত্র ১৫ হাজার খরচ করে ১ লাখ টাকা বিক্রি করেন।

এবার তিনি ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক বিঘার মতো জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। এবছর বৈরী আবওয়ার কারণে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি ১০০০টি চারা রোপণ করেছেন। এরপর সঠিক সময়ে সার ব্যবস্থাপনা, মাচা তৈরি, ডগা কর্তন, ডগা মাচায় উঠিয়ে দেওয়া ও তরমুজের গায়ে জাল পরিয়ে টানিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ৩৫ দিনের মাথায় ফুল ও ফল আসে এবং ৭০দিনের মাথায় প্রথমবার ফল সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। এরপর প্রতি সপ্তাহে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন তিনি।

তার মোট খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ২ লাখের মতো। মধু মেলা জাতের তরমুজ তিনি পাইকারিই বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজি দরে। তবে এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও লক্ষাধিক টাকা লাভ হত বলে জানান তিনি। কালিয়া উপজেলায় অসময়ে সবচেয়ে সফল তরমুজচাষি কালিয়া পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার বর্মণ জানান, বর্ষাকালে সঠিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ বছর কিছুটা দেরিতে ১৫০ বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ে তিনি ১২ হাজার চারা রোপণ করেছেন।

জমি প্রস্তুত, চারা লাগানো, মাচা তৈরি করা ও পরিচর্যাসহ তার খরচ হচ্ছে আনুমানিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় ফল আসে ৬০ দিনে সংগ্রহ করা হয়। ২টি করে ৪৮ হাজার তরমুজ ফলন হবে। প্রতিটি চারায় দুটি করে তরমুজ হয়। সে হিসেবে বাগানে ৪৮ হাজার তরমুজের ফলন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। প্রতিটি তরমুজের ওজন গড়ে প্রায় ৪ কেজির মতো হওয়ায় প্রায় ২ লাখ কেজি তরমুজের ফলন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। বাজার মূল্য ঠিক থাকলে স্থানীয় বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পাইকারি কেজি দরে তরমুজ বিক্রি তিনি প্রায় কোটি টাকা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানান তিনি।

অসময়ে আরেক সফল তরমুজ চাষি ইলিয়াছাবাদ ইউনিয়নের হেদায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা কালু শিকদার  জানান, তিনি কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এবছর প্রথমবারের মতো ভক্তডাঙ্গা বিলে ১৬ বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ের জমিতে অসময়ের তরমুজ চাষ করেন। তিনি ২০০টি চারা রোপণ করেছেন। প্রতিটি চারায় দুটি করে তরমুজ রয়েছে। সে হিসেবে বাগানে ৪০০টি তরমুজ রয়েছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন প্রায় ৪ কেজির হওয়ায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কেজি তরমুজ এখন তার জমির মাচায় ঝুলছে। এতে তার মোট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন তিনি। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে তিনি প্রায় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন। তাই ভবিষ্যতে আরও বেশি করে চাষাবাদ করবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবির কুমার বিশ্বাস  বলেন, তরমুজ এখন আর মৌসুমি ফল নয়। সারাবছরই তা চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিনের মাথায় ফুল আসে, আর ফুল থেকে পরিপুষ্ট তরমুজ হতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৮০ দিন। মোট ৮০ থেকে ৯০ দিনের জীবনকাল। বাইরে অংশ কালো ও ভেতরে অংশ টকটকে লাল। ব্লাক বেবি জাতের এ তরমুজ ওজনে প্রায় ৩ থেকে ৪ কেজি হয়ে থাকে।

এ উপজেলায় প্রথম উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে এই তরমুজের চাষে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। ফলে এলাকার অনেক চাষিই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই তরমুজ উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

নিউজ ট্যাগ: তরমুজ

আরও খবর

শখের নার্সারিতে সফল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মনির

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

জয়পুরহাটে ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩