Logo
শিরোনাম

নুসরাত হত্যার দুই বছর: আজও আতঙ্কিত পরিবার

প্রকাশিত:শনিবার ১০ এপ্রিল ২০২১ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১৫০০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে

আজ নুসরাত হত্যার দুই বছর পূর্ণ হলো। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল বিকেলে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

নুসরাত জাহান রাফির উপর অগ্নিসন্ত্রাসের দুই বছর উপলক্ষে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। নুসরাতের বাড়ির দরজায় পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ পাহারায় রয়েছেন।

নুসরাতের মৃত্যুবার্ষিকীতে কোরআন খতমের মাধ্যমে সামাজিক মসজিদ ও পারিবারিকভাবে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হবে বলে জানান নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, দুই বছর পার হলেও আজও প্রতিদিন ভোরে তাকে খুঁজি। মনে হয় এই বুঝি নুসরাত এসে জড়িয়ে ধরে মা বলে ডাকছে। তার স্মৃতি আজও ঘরের, বাড়ির সবকিছুতেই রয়েছে। তার পড়ার বই, জামা কাপড় ও পছন্দের সবকিছুই গোছানোভাবে রাখা হয়েছে ঘরের মধ্যে। আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসামিদের স্বজন ও একশ্রেণির অপপ্রচারকারীরা সক্রিয় হয়ে আমাদের পরিবার নিয়ে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা সামাজিক মান-সম্মানের ভয়ে আতঙ্কিত থাকি। আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আমাদের পরিবারের জন্য খুনিরা ও তাদের স্বজনরা মারাত্মক হুমকি হচ্ছে তাদের ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করে যা ইচ্ছা তাই লেখে যাচ্ছে। আমাদের জন্য খুনি ও তাদের স্বজনদের ব্যবহৃত ফেসবুকই হচ্ছে চরম আতঙ্ক।

তিনি আরও জানান, আমরা এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে কিছুদিন পূর্বে আমাদের আইনজীবী শাহাজাহান সাজুর মাধ্যমে জেনেছি করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাটির বেঞ্চ গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনার দুই বছর পার হয়েছে। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।

উল্লেখ্য, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। ৪দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায় মৃত্যুবরণ করে নুসরাত।

গত ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন।

আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।


আরও খবর