Logo
শিরোনাম

নগর জীবনের ক্লান্তি এড়াতে ঘুরে আসুন

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১৮ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:সোমবার ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৮০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

নগর জীবনের ক্লান্তি এড়াতে ভ্রমনের বিকল্প নেই। আর সে জন্যই দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে বছরজুড়েই থাকে পর্যটকদের ভিড়। বাংলাদেশেও রয়েছে কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল, জাফলংসহ নানা দর্শনীয় স্থান। দেশের কয়েকটি অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত দর্শনীয় স্থানের হদিস জেনে নিনঃ

শিমুল বাগান: ১০০ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তীর্ণ শিমুল বাগান। ফাল্গুন মাসে প্রতিটি গাছেই শোভা পায় থোকা থোকা রক্তলাল শিমুল ফুল। সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিকগাঁও গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই বাগানটি। ২০০৩ সালের দিকে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন সৌখিনতার বসে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে শিমুল গাছের এই বাগানটি গড়ে তোলেন। শিমুল বাগানটি দেখতে চাইলে প্রথমে আসতে হবে সুনামগঞ্জে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন শ্যামলী, মামুন, এনা বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সুনামগঞ্জ থেকে সিএনজি কিংবা মোটর সাইকেল ভাড়া করে বারিক্কা টিলায় আসতে হবে। টিলার আশেপাশে চায়ের দোকানগুলোতে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে শিমুল বাগানের যাওয়ার পথ। এছাড়া কেউ ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে যেতে হবে সিলেট। এরপর সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জগামী বিরতিহীন বাসে যেতে পারেন শিমুল বাগানে।

বরিশালের ভাসমান পেয়ারা বাজার: বরিশালের তিন জেলা ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ভাসমান এই পেয়ারা বাগানটি। ২৬টি গ্রামের প্রায় ৩১ হাজার একর জমির ওপর বাগানটি গড়ে উঠেছে। বছরজুড়ে হাট বসলেও মূলত পেয়ারার মৌসুমে হাটটি প্রাণ ফিরে পায়। ভাসমান পেয়ারা বাজারটি দেখতে সবচেয় উপযোগী সময় হলো আগস্ট মাস। সকাল ১১ টার পর পেয়ারা বাজারের ভীড় কমতে থকে। তাই সকালবেলাই বাজারে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়। বরিশালে পানি এবং সড়কপথে অর্থাৎ লঞ্চ-বাস দু'ভাবেই যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তবে পানি পথে বরিশালে যাওয়া সবচেয়ে উত্তম। লঞ্চে যেতে চাইলে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রায় প্রতিদিনই বেশকিছু লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়।। বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে অটো বা রিকশায় চৌরাস্তায় এসে বাসে করে স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট পর্যন্ত যেতে হবে। এছাড়া লেগুনায় ১৪ জন যাওয়া যায়। এরপর স্বরূপকাঠি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে নিতে পারেন সারা দিনের জন্য। আকারভেদে প্রতিটি নৌকায় ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী উঠতে পারে। কিছু ছোট নৌকাও পাওয়া যায় তবে তার সংখ্যা খুবই কম।

তাজহাট জমিদার বাড়ি: অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে রত্ন ব্যবসায়ী মান্না লাল ব্যবসায়িক কারণে মাহিগঞ্জে এসে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী কালে তাজাহাট জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। মান্না লালের মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায় বাহাদুর জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। তার সময়ে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রায় ২০০০ রাজমিস্ত্রির নিরলস পরিশ্রমে বর্তমান জামিদার বাড়িটি পূর্ণতা লাভ করে। স্থাপত্যশৈলীর অপরূপ নিদর্শণ দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়িটির চত্বরে রয়েছে গাছের সারি, খেলার মাঠ এবং দুই পাশে রয়েছে দু'টি পুকুর। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল এবং আম আর কাঁঠাল বাগান। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাজহাট জমিদার বাড়িকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করে এবং ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে জমিদার বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তরিত করা হয়। জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে মোঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কোরআন শরীফ, মহাভারত ও রামায়ণসহ বেশকিছু আরবি এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীণ পান্ডুলিপি। জাদুঘরটিতে কাল পাথরের বিষ্ণুর প্রতিকৃতি ছাড়াও প্রায় ৩০০টি মূল্যবান নিদর্শন রয়েছে। রাজধানীর কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস রংপুরে উদ্দেশে নিয়মিতভাবে যাত্রা করে। এরপর রংপুর বাসস্টান্ড থেকে রিকশাযোগে জমিদার বাড়িটিতে যাওয়া যায়।

নিকলী হাওড়: ঢাকা থেকে মাত্র তিন ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত অপূর্ব এক জলাভূমি কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওড়। ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের কাছে এই হাওড়টি অবশ্যই অনেক ভাল লাগবে। ঢাকা থেকে সকালে রওনা হলে সারাদিন ঘুরে আবার বিকালের মধ্যেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করা সম্ভব। তবে এখানে রাতের এবং সকালের রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন, এই দুই সময়ের সৌন্দর্যেও রয়েছে ভিন্ন মাত্রা। যদি সকালে গিয়ে আবার রাতের মধ্যেই ফিরে আসতে চান তাহলে অবশ্যই সকাল ৭ টার আগেই বাসে রওনা দিতে হবে। ঢাকা সায়দাবাদের পাশে গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে অনন্যা সুপার বাসে আসতে হবে। কিশোরগঞ্জের আগেই কটিয়াদি বাসস্ট্যান্ডে নেমে গেলেই হবে। এখান থেকে নিকলী যেতে সিএনজি রিজার্ভ করতে হবে।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক: বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। বিখ্যাত এই চিত্রশিল্পীর উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মসমূহ এখানে সংরক্ষিত আছে। এই আর্ট গ্যালারীটি ব্রক্ষপুত্র নদের তীরে সাহেব কোয়ার্টার নলিনী রঞ্জন বাড়িতে অবস্থিত। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস সংলগ্ন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এলাকায় বাঁধ দিয়ে একটি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। পার্কটিতে আছে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকা, চরকি এবং বেশকিছু খাবারের দোকান। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে বাসে যেতে প্রায় ৩ ঘন্টার মতো সময় লাগে। ঢাকার মহাখালী থেকে এনা, সৌখিন বাস সার্ভিস সহ আরো বেশকিছু বাস ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করে।  এছাড়াও ঢাকা থেকে প্রতিদিন আন্তঃনগর এবং মেইল ট্রেন ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে য়ায়। ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন এবং বাস স্টপ থেকে রিকশা যোগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কে যাওয়া যায়।

বাঘা মসজিদ: রাজশাহী শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে বাঘা উপজেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাঘা মসজিদ। একটি উঁচু টিলার উপর টেরাকোটা অলংকরণে সমৃদ্ধ দশ গম্বুজ বিশিষ্ট অতুলনীয় এই মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। মসজিদ সংলগ্ন একটি বিশাল দীঘি রয়েছে যেখানে শীতের অতিথি পাখীদের দৃশ্য মনোমুখগ্ধকর। মসজিদ চত্ত্বরের পার্শ্বেই রয়েছে একাধিক পীর আউলিয়ার মাজার। প্রতিদিন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষসহ অসংখ্য পর্যটক মসজিদ, তৎসংলগ্ন দীঘি ও মাজার দর্শন করে থাকেন। মসজিদের ভিতরে-বাইরে সবর্ত্রই টেরাকোটার নকশা বর্তমান। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশপথে রাজশাহী যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে গ্রীণ লাইন, গ্রামীন ট্রাভেলস এবং দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস রাজশাহীর উদ্দেশে যাতায়াত করে।  আর ঢাকার কমলাপুর থেকে রবিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্ক-সিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস।  রাজশাহী থেকে বাঘা যাওয়ার সহজ উপায় হল বাস। রাজশাহী সদর বাস টার্মিনাল থেকে বাঘার বাস ছাড়ে।

সিদ্ধেশ্বরী মঠ: মাগুরা শহর থেকে দেড় মাইল দূরে আঠারখাদা গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে সিদ্ধেশ্বরী মঠ অবস্থিত। সু-প্রাচীন কালে কালিকাতলা শ্মশান নামে পরিচিত ছিল জায়গাটি। গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই স্থানটি ছিলো সন্যাসীদের তপস্যার স্থল। একসময়ে বহু সাধুজনের সমাগম ঘটতো স্থানটিতে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাক সেনাদের এ দেশীয় দোসররা মন্দিরের অপূরণীয় ক্ষতি করে। ঢাকা থেকে সোহাগ, হানিফ, দ্রুতি, ঈগল পরিবহনের বাসে মাগুরায় যাওয়া যায়।

সুপ্তধারা ঝর্ণা: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত সুপ্তধারা ঝর্ণা। চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের চিরসবুজ বনাঞ্চল সমৃদ্ধ সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে ঝর্ণাটি অবস্থিত। ইকোপার্কটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত। তবে বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্যান্য মৌসুমে এই ঝর্ণাটির পানি কম থাকে। বর্ষাকালে ঝর্ণাটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থীরা সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে এসে ভিড় করেন। সড়ক পথে ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড ইকোপার্কে আসতে এস. আলম, সৌদিয়া, গ্রীন লাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস সহ বিভিন্ন পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস আছে। চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসলে সীতাকুন্ড বাস স্টপেজ থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাটে বাস থেকে নামতে হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। শহরের মাদারবাড়ী ও কদমতলী বাস ষ্টেশন থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার বাসগুলো ছাড়ে।


আরও খবর

অরণ্যযাপনের আগে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন

বৃহস্পতিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩