Logo
শিরোনাম

মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ আর মহামারী দুর্বল করছে বিশ্ব অর্থনীতিকে

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২২ সেপ্টেম্বর 20২২ | হালনাগাদ:রবিবার ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১০২৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

কোভিড-১৯ মহামারী পৃথিবী থেকে শেষ হয়ে যায়নি। এখনো প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর খবর আসে। ২০১৯ সালের শেষদিন শুরু হওয়া এ মহামারী ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। যার রেশ গিয়ে পড়ছে সরাসরি বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। তারপর গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ, যা যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। সরবরাহ চেইনে সংকটসহ নানা কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। আর এসব কিছুর কারণে চাপে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। সৃষ্টি হয়েছে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি।

বৈশ্বিক মন্দার কোনো কাঠামোবদ্ধ সংজ্ঞা নেই। বিশ্বব্যাংক এ শব্দযুগল ব্যবহার করে জনপ্রতি বৈশ্বিক জিডিপির পতন বোঝানোর জন্য। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কারখানার উৎপাদন, আন্তঃসীমান্ত পুঁজির প্রবাহ, কর্মসংস্থান এবং বাণিজ্যের মতো সূচকে বড় ধরনের পতন সৃষ্টির ফলে অর্থনীতিতে যে মন্দা সৃষ্টি হয়, সেটিই সত্যিকারের বৈশ্বিক মন্দা।

কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে বলেছিল, বিশ্ব অর্থনীতি এ মুহূর্তে মন্দার কবলে পতিত হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে রয়েছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। এর সঙ্গে ছিল মূল্যস্ফীতি ও মহামারীর দীর্ঘমেয়াদি চাপও। ওয়াল স্ট্রিটও চিন্তিত মূল্যস্ফীতি নিয়ে। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে যদি এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে তা দুর্বল করে দেবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকেও।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। যার অর্থ হলো সমস্যা বাড়ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, এর বাইরেও। সম্পত্তি বন্ধকের উচ্চহারের কারণে মার্কিন আবাসন ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি স্বল্পতার কারণে জার্মানিতে কলকারখানার উৎপাদন কমেছে এবং নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চীনের কোথাও কোথাও লকডাউন ঘোষণার কারণে দেশটির ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতে আমানতের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সরকারগুলো বিভিন্ন খাতের খরচ কমিয়ে আনছে। এমনকি মহামারীর জন্য ত্রাণ সহায়তা খাতে যে বরাদ্দ ছিল তাও কমানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতি এ মুহূর্তে নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে সবচেয়ে কম সহায়তা পাচ্ছে। গত ৫০ বছরে এমন সময় আর আসেনি। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকও বৈশ্বিক মন্দা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে। পিজিআইএম ফিক্স ইনকামের প্রধান অর্থনীতিবিদ দালীপ সিং বলেন, সামনের দিনগুলোর পথচলা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। আমরা এমন একটা পৃথিবীতে রয়েছি, যেখানে নতুন নতুন ধাক্কার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গত শুক্রবার ফেডএক্স করপোরেশনের শেয়ারদরে পতন দেখা দেয়। তার ঠিক আগের দিনই কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন।

সিটিগ্রুপ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্মরণকালের সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়িয়েছে সুদের হার। চলতি মাসে ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও চিলির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভও এ হার বাড়াবে। আগামী সপ্তাহের বৈঠক থেকে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। আর তাহলে সেটি হবে গত মার্চ থেকে পঞ্চমবারের মতো সুদের হার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় কিছু অর্থনীতিবিদ এমন শঙ্কাও প্রকাশ করছেন, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। মূলত সুদের হার বাড়ানোর জন্যই এসব করা হচ্ছে। গত বছর ঠিক এর উল্টোটি করা হয়েছিল। সে সময় তারা বলেছিল, মূল্যস্ফীতি অস্থায়ী হবে। একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একযোগে আমানতের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে হাঁসফাঁসের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বাড়ানোর কারণে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে গিয়েছে। যার কারণে মার্কিনদের জন্য আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছে। একই সময়ে অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসাগুলোর জন্যও নিজ দেশের বাইরের পণ্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। যেহেতু জ্বালানি তেলের দাম ডলারে পরিশোধ করতে হয়, তাই অন্যতম তেল আমদানিকারক দেশ যেমন তিউনিসিয়া বেশ বড় সমস্যায় পড়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ তাদের স্থানীয় মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কেবলই কমছে।

সিটিগ্রুপের গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশির ভাগ সময়ই একটি আরেকটির সঙ্গে চলেছে। ১০৮০ সালের পর থেকে প্রতি চারটি মন্দার মধ্যে একটিতে দেখা গিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ধীরগতি দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বজুড়ে মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে অথবা যুক্তরাষ্ট্রে ও বাকি বিশ্বে একই সঙ্গে মন্দা তৈরি হয়েছে।


আরও খবর

এলপিজির দাম আরও বাড়ল

বৃহস্পতিবার ০২ নভেম্বর 2০২3