Logo
শিরোনাম

মহামারিতেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সাফল্যের মাইলফলক

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৪ জানুয়ারী ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২৯১০জন দেখেছেন
Image

ফিরোজ মাহমুদ, ঢাকা

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শুধু স্বাস্থ্যের নয়, প্রভাব ফেলেছে বিশ্বের গোটা অর্থনীতিতে। ভাইরাসটির প্রভাবে দেশের প্রায় সব খাতেই মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা হলেও ঈর্ষান্বিত সফলতার সঙ্গে এগিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত। লকডাউনে যখন হাট-বাজার, অফিস আদালত সব বন্ধ হয়ে যায়, তখনও মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট খাতে চলমান রাখা হয় ভ্রাম্যমাণ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বিক্রি। এছাড়া ক্রান্তিকালেও বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন, চলতি মৌসুমে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ১৪৬০ কোটি জাটকা, শতভাগ দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানি এবং মাছের প্রজন্ম উদ্ভাবন, বিলুপ্তপ্রায় জাতের মাছ সংরক্ষণ, চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নসহ নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানাযায়, বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্বেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগের ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৬ হাজার ৫৯১ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে ৪০৮৮ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা আয় হয়েছে। মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ লাখ ২৫ হাজার ৯৬৪টি জেলে পরিবারকে ৯৬ হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন ভিজিএফ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জাটকা সংরক্ষণ, অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা ও প্রজননক্ষম মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া চলতি প্রজনন মৌসুমে ৩৯ হাজার ৩১০ কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৪৬০ কোটি বেশি। দেশের ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর দেশব্যাপী ২২ দিন ইলিশ মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। এ সময়ে মা ইলিশের প্রজনন সফলতার ওপর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁদপুর নদীকেন্দ্র থেকে পরিচালিত গবেষণা ফলাফল সংবলিত প্রতিবেদন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী- চলতি প্রজনন মৌসুমে (৪ থেকে ২৫ অক্টোবর) ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মা ইলিশ সম্পূর্ণরূপে ডিম ছেড়েছে। এতে চলতি প্রজনন মৌসুমে ৩৯ হাজার ৩১০ কোটি জাটকা (১০ শতাংশ বাঁচার হার ধরে) ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রজনন সফলতা ছিল ৫১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩৭ হাজার ৮৫০ কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রজনন মৌসুমে অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৬০ কোটি জাটকা যুক্ত হয়েছে।

এছাড়া সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণ নিশ্চিতকল্পে সরকারের পরামর্শ ও নির্দেশনায় গবেষণা ও জরিপ জাহাজ আর ভি মীন সন্ধানী বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদের জরিপ ও গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে। গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চলমান। মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২০ সালে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে এ লাইভ জিন ব্যাংকে দেশের বিলুপ্তপ্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। রুই মাছের চতুর্থ প্রজন্ম উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা মূল জাতের চেয়ে ২০ শতাংশের অধিক বর্ধনশীল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে উদ্ভাবিত হওয়ায় এটিকে সুবর্ণ রুই নামকরণ করা হয়েছে। করোনাকালে দেশের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে ভিন্ন এক উদ্যোগ নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। করোনার সময় উৎপাদিত মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য এবং প্রাণি ও প্রাণিজাত পণ্য বাজারজাতকরণে স্থানীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ ও অনলাইন বাজার ব্যবস্থা চালু করা হয়। কোভিডকালে ভ্রাম্যমাণ ও অনলাইন বিক্রয় ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং অন্যান্য মৎস্য ও প্রাণিজাত দ্রব্য বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে ২০২১ সালে ঈদুল আজহায় সারাদেশে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু কোরবানি হয়। মহামারির কারণে যেহেতু অন্য দেশ থেকে পশু আসেনি সেক্ষেত্রে শতভাগ দেশি পশু দিয়েই সম্পন্ন হয় কোরবানি। যা স্বয়ংসম্পূর্ণতার একটি প্রতীক হিসেবেই বিবেচিত হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৬৫ পশুসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু ছিল। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে প্রায় ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু কোরবানি করা হয়েছিল।

এদিকে জাতীয় চিড়িয়াখানাকে ডিজিটালাইজড ও বিশ্বমানের করে বদলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্পূর্ণ বিদেশি মাস্টারপ্ল্যানে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চিড়িয়াখানার আদলে গড়ে তোলা হবে চিড়িয়াখানা। এই প্ল্যান পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রকৃতই হয়ে উঠবে বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ। চিড়িয়াখানার মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড। এই কোম্পানির টিম লিডার বার্নার্ড হ্যারিসন নিজেই মূল দায়িত্বে রয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বসবাসরত বার্নার্ড হ্যারিসন আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছেন।

গবাদিপশুর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সারাদেশে ৮ হাজার ৪৬৪টি কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র/পয়েন্ট স্থাপন করেছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭১ জন মৎস্যচাষি/খামারি/সুফলভোগীকে ৮১৮ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসময়ে বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭২ জনকে ৮৪ কোটি টাকার উৎপাদন উপকরণ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩ হাজার ৮১ জন খামারিকে ১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কোভিড-১৯ বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেওয়া হয়। সচেতনতামূলক প্রচারণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সহযোগিতায় নিয়মিত মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম খাই- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই শীর্ষক এসএমএস পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন দপ্তর/সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। রুই জাতীয় মাছের বৃহত্তম প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, করোনা সংকটেও উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রেখেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, একই সঙ্গে রফতানিও বেড়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য মন্ত্রণালয় অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। তার একটি পদক্ষেপ হচ্ছে- নগদ সহায়তা ও উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। চলতি প্রজনন মৌসুমে ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মা ইলিশ সম্পূর্ণরূপে ডিম ছেড়েছে। এতে চলতি প্রজনন মৌসুমে পরিবারে যুক্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ৩১০ কোটি জাটকা ইলিশ।


আরও খবর

এলপিজির দাম আরও বাড়ল

বৃহস্পতিবার ০২ নভেম্বর 2০২3