Logo
শিরোনাম

কুমিল্লায় হলুদ পদ্মের পরিচয় উন্মোচিত

প্রকাশিত:শনিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ | হালনাগাদ:শনিবার ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ৩১৯০জন দেখেছেন
Image

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে পাওয়া হলুদ পদ্মের রহস্যের জট অবশেষে খুলেছে। বাংলাদেশ তো বটেই, এশিয়াঅস্ট্রেলিয়া মহাদেশের কোথাও হলুদ পদ্মের কোনো প্রজাতি নেই। প্রশান্ত মহাসাগরের এক পাশে দেখা যাওয়া সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মটিকে এশীয় পদ্ম বলা হয়। আর উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যাওয়া হলুদ রঙের পদ্মটিকে আমেরিকান পদ্ম নামে ডাকা হয়। তাই তো কুমিল্লায় বুড়িচংয়ে পাওয়া হলুদ পদ্ম নিয়ে দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তাহলে কি আমেরিকান পদ্ম কোনোভাবে বাংলাদেশে বংশবিস্তার করল?

গত সেপ্টেম্বরে ওই হলুদ পদ্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একদল শিক্ষক তাতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাঁরা কুমিল্লার গোমতী নদীতে জন্মানো ওই পদ্ম নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। এর নমুনা সংগ্রহ করে তা নানা পরীক্ষানিরীক্ষার পর তাঁরা নিশ্চিত হন, এটি আমেরিকান পদ্ম নয়। বিজ্ঞানীদের দলটি বলছেন, এটি আসলে এশীয় পদ্মেরই একটি নতুন প্রকরণ বা ধরন, যা বাংলাদেশেই প্রথম দেখা গেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল হাসানের নেতৃত্বে একই বিভাগের অধ্যাপক আল মুজাদ্দেদ আলফাসানী ও অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন ওই পদ্ম চিহ্নিত করার গবেষণাটি করেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব প্ল্যান্ট টেক্সোনমির বিজ্ঞান সাময়িকী প্ল্যান্ট টেক্সনএর ডিসেম্বর২০২০ সংখ্যায় এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক দলটি ওই হলুদ পদ্মের নাম দিয়েছেন গোমতী। গোমতী নদীর প্লাবনভূমিতে এটি জন্মানোর কারণে এই নাম। এশীয় পদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Nelumbo nucifera। এই হলুদ পদ্মের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে gomoti, Bangladesh শব্দ দুটি যোগ হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে পদ্মের এই নতুন কাল্টিভার বা প্রকরণটি তৈরি হয়েছে। এটি এশীয় পদ্মের মতোই, তবে গঠনগত কিছু পার্থক্য আছে। তবে আমেরিকান হলুদ পদ্মের সঙ্গে এর অমিল অনেক বেশি। ফলে এটি আমেরিকান হলুদ পদ্ম নয়, এটা তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে এটিকে তাঁরা এশীয় পদ্মের একটি প্রকরণ বলছেন।

গবেষক দলটি বলছেন, কোনো একটি উদ্ভিদের একটি থেকে আরেকটি প্রজাতির ফুল, কাণ্ড, পাতা, পুংকেশর, স্ত্রীকেশর, পরাগরেণুসহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকে। একটির সঙ্গে আরেকটি মিলঅমিলের ধরনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, সেটি কি কোন প্রজাতি, নাকি একটি প্রকরণ?

বিজ্ঞানীরা ধানের উদাহরণ দিয়ে বলছেন, যেমন ধান নিজে একটি স্বতন্ত্র প্রজাতি। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে এবং মানুষের গবেষণার মাধ্যমে ধানের হাজার হাজার প্রকরণ তৈরি হয়েছে। একটি প্রকরণ থেকে আরেকটি প্রকরণের পার্থক্য সামান্য; কিছু গাছ, ফল, দানাসহ অন্য সবকিছুই প্রায় একই রকমের। যেমন বাংলাদেশে যে এশীয় পদ্মটি দেখা যায়, তা একটি প্রকরণ, কিন্তু দুটি রঙের হয়ে থাকে। পদ্মের দুটো প্রজাতি ও দুই হাজারের মতো প্রকরণ রয়েছে।

তবে দেশের উদ্ভিদ শ্রেণিবিদ্যার জনক হিসেবে চিহ্নিত অধ্যাপক সালার খান তাঁর এক প্রবন্ধে বাংলাদেশে হলদু রঙের পদ্ম আছে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি কোথায় আছে, তা তিনি উল্লেখ করে যাননি।

নিউজ ট্যাগ: পদ্ম ফুল

আরও খবর