কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত
হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল উত্তর কোরিয়া। একই সঙ্গে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম
জানিয়েছে, সে দেশে আরও হাজার হাজার মানুষ মধ্যে জ্বরের লক্ষণ রয়েছে। স্থানীয় সময় আজ
শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, কোভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্টে
আক্রান্ত হওয়ার পর এক জনসহ জন্য জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও বলছে—জ্বরে আক্রান্ত এক লাখ ৮৭ হাজার ব্যক্তিকে ‘সঙ্গনিরোধে রেখে চিকিত্সা’ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞেরা মনে
করেন উত্তর কোরিয়ায় বেশ অনেক দিন ধরেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু, দেশটির
কর্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বারের মতো কোভিডে আক্রান্ত রোগীর তথ্য জানায়।
উত্তর কোরিয়া
বলছে দেশটির রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্টের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, এবং
সেখানে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, কত জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ
করা হয়নি।
তবে আজ শুক্রবার
একটি হালনাগাদ তথ্যে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে যে, ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবটি
রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়েছে।
কেসিএনএ বলছে,
‘এপ্রিলের শেষ দিক থেকে এক ধরনের জ্বর দেশব্যাপী
বিস্ফোরকের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এ জ্বরের কারণ শনাক্ত করা যায়নি।’
প্রায় সাড়ে তিন
মানুষের মধ্য ওই জ্বরের লক্ষণ দেখা গেছে বলে কেসিএনএ’র খবরে বলা হয়েছে। তবে, জ্বরে
আক্রান্তদের মধ্য কতজন কোভিড পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছে, তা জানায়নি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমটি।
বিশ্লেষকেরা ধারণা
করছেন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এক ধরনের ‘জ্বর’ দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার
করা যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা হলো—খুব সম্ভবত দেশটি অভূতপূর্ব এক প্রাদুর্ভাবের কবলে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা আরও
বলছেন ২৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ উত্তর কোরিয়া অপ্রতুল টিকাদান কর্মসূচি ও দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার
কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
গত বছর উত্তর কোরিয়াকে কয়েক মিলিয়ন অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড টিকা এবং চীনের তৈরি
টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, উত্তর কোরিয়া সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
উলটো দেশটি দাবি করে তারা ২০২০ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে
দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছে।
উত্তর কোরিয়ার
সঙ্গে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্থল সীমান্ত রয়েছে। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াকে করোনা মহামারির
বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। এর মধ্যে চীন বর্তমানে দেশটির বড় শহরগুলোতে লকডাউন দিয়ে ওমিক্রনের
প্রকোপ ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আজ শুক্রবার কেসিএনএ
জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন দেশটির একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিদর্শন
করেছেন এবং ‘কোভিড-১৯-এর দেশব্যাপী
ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে পেরেছেন।’
উত্তর কোরিয়ার
বর্তমান পরিস্থিতিটিকে কেসিএনএ ‘তাত্ক্ষণিক জনস্বাস্থ্য
সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
কোভিড-সংক্রান্ত
নতুন বিধি-বিধানের রূপরেখা তৈরির এক বৈঠকে গতকাল বৃহস্পতিবার কিমকে টেলিভিশনে মাস্ক
পরা অবস্থায় দেখা গেছে। বলা হচ্ছে, প্রথম বারের মতো কিমকে মাস্ক পরতে দেখা গেল।
বৈঠকে কিম ‘সর্বাধিক জরুরি’ ভিত্তিতে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে
নির্দেশ দেন। কিমের নির্দেশের মধ্যে স্থানীয় লকডাউন এবং কর্মক্ষেত্রে বেশি লোক একসঙ্গে
জড়ো হওয়ায় বিধিনিষেধের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার
করোনার মহামারির শুরু থেকেই দাবি করে আসছে যে, তারা কোভিড মহামারি প্রতিরোধে ‘উজ্জ্বল সাফল্য’ পেয়েছে। কিন্তু, দেশটিতে
মহামারিকালজুড়ে কোভিডের সম্ভাব্য উপস্থিতির লক্ষণ দেখা গেছে। মাঝে মধ্যেই অসমর্থিত
সূত্রে খবর পাওয়া যেত যে, উত্তর কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এবং হ্যাজমাট
স্যুট পরা কর্মীদের দেখা গেছে।