গত এক বছরে দেশের শীর্ষ ১২টি ই-কমার্স
প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে ১০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ
অর্থ ভোগ-বিলাসিতা ও অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা হয়েছে। ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবার
(এমএফএস) ৮৬টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসব অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স
ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকে বিএফআইইউ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরে। এতে অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।
সংস্থাটি জানায়, ১২ প্রতিষ্ঠানের তথ্য
দেখে সার্বিক খাতের একটি চিত্র বুঝানো হয়েছে। বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে
বলা হয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ লেনদেন নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে বেশ কিছু
ই-কমার্সের করপোরেট কাঠামো না থাকায় এ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ব্যক্তিনির্ভর
অনেক প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশ হয় নিজস্বভাবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঠিক
তথ্য পাওয়া যায়নি।
শুধু ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস)
প্রতিষ্ঠানে যেসব লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৬ হাজার
১১৬ কোটি টাকা বা ৬৬ শতাংশ সরবরাহকারী ও বিক্রেতাকে দেওয়া হয়েছে। এটিকে স্বাভাবিক বলা
হচ্ছে। তবে বাকি ৩৪ শতাংশ অর্থ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ খরচেরই
কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কারণ ছাড়াই এসব খরচ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অর্থ কোথায়
গেছে তাও চিহ্নিত করতে পারেনি বিএফআইইউ।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এক বছরে দেশের
শীর্ষ ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাজ থেকে ১০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার সংগ্রহ
করেছে। মোট সংগ্রহ করা অর্থের ৫ শতাংশ বা ৪৪১ কোটি টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় হয়েছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাড়ি-গাড়ি ও বিদেশ ভ্রমণসহ বিলাসী জীবনযাপনে এসব অর্থ
ব্যয় করেছেন। এ ছাড়া ব্যবসার বাইরেও বা ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক নেই— এমন খাতে ব্যয়
করেছেন মোট টাকার ৬ শতাংশ বা ৫৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বড় বড় ইভেন্টে স্পন্সর হিসেবে
৪৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।
বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে
বলা হয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। ৫২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের
ওপর তদন্ত করে ৩৩টির সারাংশ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনের
বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) হয়েছে ৮ হাজার
৫৭১টি। আগের বছরের চেয়ে এ সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬২ দশমিক ৩২ শতাংশ বা ৩ হাজার ২৯১টি।
২০২০-২১ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ২৮০টি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম
হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার
৫৭৩টি।
মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘সব সন্দেহজনক লেনদেন
(এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। এরপর যদি কোনেও অপরাধের
তথ্য প্রমাণ মেলে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেই। এ পর্যন্ত অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
গ্রাহক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো অর্থবছরে
সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৯৯৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরে
৪ হাজার ৪৯৫টি রিপোর্ট জমা পড়েছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিপোর্ট জমা দিয়েছে ১০৬টি।
আর এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ৪৫৭টি রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী
পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা, মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ, বিএফআইইউ পরিচালক রফিকুল
ইসলাম, মো. আরিফুজ্জামান ও অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।