Logo
শিরোনাম

ঘুরে আসুন কান্তজির মন্দির

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ১০২০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

কান্তজিউ মন্দির, কান্তানগর মন্দির বা কান্তজির মন্দির; যেভাবেই বলা হোক না কেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে কান্তজির মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। দেশের যেসকল প্রথম সারির ঐতিহাসিক স্থান, পুরাকীর্তি বা নিদর্শন রয়েছে, কান্তজির মন্দির তার অন্যতম। কান্তজির মন্দিরের আসল নাম- কান্তজিউ মন্দির। তবে, লোক মুখে বলতে বলতে এক সময় এর নাম কান্তজির মন্দির হয়ে যায়। বর্তমানে এই নামেই ডাকা হয়। কান্তজির মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত। পৌরাণিক কাহিনী মতে, যা লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত।

ধারণা করা হয়, রাজা সুমিত হর কান্ত এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মন্দিরের উত্তর দিকের বেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে এই মন্দিরের কাজ শুরু করেন। ১৭২২ সালে তার মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পালিত পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং এর চুড়াগুলো ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের সংস্কার কাজ করেন। তবে সুউচ্চ চূড়াগুলো আর মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

স্থাপত্যশৈলী : মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে- রামায়ন, মহাভারতসহ নানা পৌরণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় পনেরো হাজারের মত টেরাকাটা টালি সংযুক্ত রয়েছে। উপরের দিকে তিন ধাপে নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারপাশের সবগুলো দড়জা দিয়েই ভেতরের দেবমুর্তি দেখা যায়। চারপাশ সমান হলেও পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সবগুলো প্রবেশ পথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খাঁজগুলো আলাদা করা হয়েছে। স্তম্ভগুলো দেখতে খুবই সুন্দর এবং কারুকার্য খচিত। মন্দিরের উপরের দিকে হাতি এবং ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সৈন্যদের যুদ্ধের চিত্র কারুকাজ করা হয়েছে। যার থেকে ঐতিহাসিক মহাভারতের রামায়ন যুদ্ধের একটা বর্ণনা পাওয়া যায়।

মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় একুশটি ও দ্বিতীয় তলায় সাতাশটি দরজা ও খিলান রয়েছে। তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র তিনটি দরজা। মন্দিরের চারপাশে রয়েছে ভক্তদের জন্য বিশ্রামাগার এবং পেছনে রয়েছে একটি শিবমন্দির। প্রতিবছর সারাদেশ থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও প্রচুর ভক্ত-অনুরাগী ও পর্যটকের আগমন ঘটে এই মন্দিরে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে এই কান্তজির মন্দিরকে কেন্দ্র করে মন্দিরের পাশের জমিতে রাসমেলার আয়োজন করা হয়। ২০১৫ সালের কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের বুক স্টল তৈরি করা হয়েছিলো কান্তজির মন্দিরের আদলে, যা পুরো বইমেলার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পটভূমিতে কান্তজির মন্দিরের গুরুত্ব অপরীসীম। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের এ ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা বা পুরাকির্তী নিজ চোখে দেখা একান্ত প্রয়োজন।

অবস্থান : দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলায় এর অবস্থান। ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে টেপা নদীর ধার ঘেষে কান্তনগর নামক এক নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত কান্তজির মন্দির।

যাতায়ত: রাজধানী ঢাকা এবং সারা দেশ থেকে দিনাজপুর জেলার উদ্দেশে যেসকল যানবাহন ছেড়ে যায়, তাতে করে দিনাজপুর শহরে গিয়ে শহর থেকে কান্তজির মন্দিরে যাওয়া যায়। আবার সরাসরি যেতে চাইলে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড়ের গাড়িতে উঠে দিনাজপুর দশমাইল মোড় পেরিয়ে কান্তজির মন্দির বাস স্টপেজে নেমে তারপর মন্দিরের দিকে যেতে হবে।

থাকা খাওয়া : দিনাজপুর শহরে অনেক ভালো মানের এবং মধ্যম মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। মালদহ পট্রিতে আছে বেশ কিছু মুখরোচক খাবারের দোকানও। এ ছাড়া কান্তনগর বাস স্টান্ডে রয়েছে ছোটবড় অনেক খাবারের হোটেল।

নিউজ ট্যাগ: কান্তজিউ মন্দির

আরও খবর

অরণ্যযাপনের আগে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন

বৃহস্পতিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩