কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী
সীমান্তে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী
(বিএসএফের) ধাওয়া খেয়ে নদী পারাপারের সময় নদীতে পড়ে দুই শিশু নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজ
শিশুরা পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের পশ্চিম শুকাতি গ্রামের রহিম
উদ্দিনের ছেলে-মেয়ে। শুক্রবার (১ জুলাই) গভীর রাতে ফুলবাড়ী সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ভারত
থেকে দেশে ফেরার সময় দালালদের ভূল পথে নিয়ে আসার কারনে বিএসএফের ধাওয়ায় মায়ের হাত থেকে
রাতের অন্ধকারে নদীতে ভেসে গেছে কোলের আদরের দুই সন্তান। সাঁতার না জানায় মা সামিনা
খাতুন বেঁচে গেলেও ১৮ ঘন্টাও পায়নি শিশুদ্বয়কে। দু’দেশের নোম্যান্স ল্যান্ডের নীলকুমর
নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলোতে শিশুদের সন্ধান পাওয়ার আশায় হর্ন্নে হয়ে ঘুরছেন স্বজনরা।
তবে মারা গেছে কি না ,বেঁচে আছে সে জন্য নদীর তীরে চোখ রাখছেন তারা।
নিখোঁজ শিশুর
সর্ম্পকের দাদা জিয়া উদ্দিন জানান, প্রায় ১৬ বছরে আগে অভাবের তারনায় আমার ভাগ্নে অন্যদের
সাথে কাজের সন্ধানে ইটভাটায় কাজ করার জন্য দিল্লীতে যান। সেখানে কাজ করার পর ২০০৫ সালে
ভারতের দিনহাটার নয়ারহাট এলাকার সাজেদুল হকের মেয়ের সাথে রহিম উদ্দিনের বিয়ে হয়। সেখানে
তারা বসবাস করেন। সময় পেলে মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন রহিম উদ্দিন। এর মধ্যে একটি মেয়ে
ও একটি ছেলে জন্ম নেয় তাদের ঘরে। মেয়েটি নাম পারভীন খাতুন (৮) ও ছেলের নাম শাকিবুল
হাছান ( ৪)। টাকাও পাঠাতেন তার বৃদ্ধ মা রহিমার কাছে।
তিনি বলেন, নিখোঁজ
ওই দুই শিশু ভারতের ভূ-খন্ডে জন্ম নিলেও দাদার বাড়ীতে আসেনি কোনদিন। সে জন্য ইদুল আযহা
পালন করার জন্য প্রথমবারের মত ছেলে মেয়েদেরকে বাড়ীতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিল রহিম উদ্দিন।
তার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কাঁটাতার পার হওয়ার সময়।
নিখোঁজ শিশুদের
বাবা রহিম উদ্দিন জানান ,সন্তানদের বয়স হলো আমার জন্ম ভূমি দেখেনি। সে জন্য ঈদ করার
সুবাধে বাড়ীতে প্রথম বার নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। পরিবারের ও ছেলে মেয়েদের নতুন কাপর
চোপর কিনে ট্রাংক এ রাখা হয়েছে। নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য ভারতের দালালদের সাথে ৩০ হাজার
টাকা চুক্তি করা হয়েছে। তারা আমাদেরকে সীমান্তে কোন এক বাড়ীতে নিয়ে এসে রাখেন রাতে।
সেখানে আরও ২০-২৫ জন নারী পুরুষ ও শিশুও ছিল।
তিনি আরও জানান,
মধ্য রাতে ৯৪৩ নং মেইন পিলারের পাশে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের র্ধমপুর সীমান্ত
দিয়ে পার করার চেষ্টা করেন। তারা কাঁটাতার পার করে নদী পথে নিয়ে আসেন। সে জন্য নদীর
তীরে আমাদেরকে রাখেন। এ সময় ভারতের শেউটি -১ ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে
দেখার পর আমাদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় দালালরা তরিঘরি করে নদী পার হওয়ার জন্য বলে। আমি
জিনিসপত্র নিয়ে নদীর মাঝ পথে যাই। এ সময় আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে নামেন
। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানে না। স্রোতের টানে রাতের অন্ধাকারে স্ত্রীর হাত থেকে
আমার সন্তানরা নিখোঁজ হয়। পানিতে ডুবে অনেক চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করেছি। তাদের সন্ধান
পাইনি। কষ্ট করে আমার স্ত্রীকে পার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। তারা বেঁচে আছে , না
মারা গেছে ,তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের
সাবেক ইউপি সদস্য আদম আলী বকুল জানান, নীলকুমর নদীর তীরে অনেক লোকজন নিখোঁজ শিশুর
লাশ খোঁজার জন্য জড়ো হয়েছে। পানিতে ডুবেও খুঁজছে।
এ বিষয় লালমনিহাটের
অধীনে কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন জানান, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে দুইটি
শিশু বাচ্চা নিখোঁজ হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। আমাদের টহল সেখানে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়াও
এ বিষয় বিএসএফকে অবগত করা হয়েছে।