Logo
শিরোনাম

‘আইনজীবী রেজাউলের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে এসআই মহিউদ্দিন’

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৫ জানুয়ারী ২০২১ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ২৫৯৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিমকে আটকের পর থেকেই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। আটক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়েও তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় এসআই মহিউদ্দিন মাহি। এমনকি তীব্র শীতেও তার গায়ে কোনও পোশাক ছিল না, দেওয়া হয়নি খাবার। এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে নিহতের বাবা ও স্ত্রীর কাছ থেকে। এছাড়া রেজাউলকে গাড়িতে তোলার পূর্বে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

এদিকে সহকর্মী রেজাউল করিমকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে আইনজীবীরা অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিনের কঠোর বিচারের দাবি জানিয়ে নগরীতে মানববন্ধন করেছেন। সুষ্ঠু বিচার না পেলে কঠোর আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবীরা।

নিহতের বাবা ইউসুফ মুন্সি ও স্ত্রী মারুফা বেগম অভিযোগ করেন, ধরার পরপরই নির্যাতন শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে মাদক উদ্ধারের দাবি করা হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাদক দেখানো হয়নি। গ্রেফতারের ২ ঘণ্টা পর তাকে হাজির করা হয় নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। সেখানে তীব্র শীতের মধ্যে খালি গায়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়। গ্রেফতারের পর থেকে থানায় সোপর্দ করার আগ পর্যন্ত তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

নিহত রেজাউল করিমের বিভিন্ন একাডেমিক সার্টিফিকেট নিয়ে বিলোপ করছেন তার বৃদ্ধ বাবা-মা। স্বামী হারানোর শোকে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন রেজাউলের স্ত্রী। তারা জানান, বাবার দেওয়া টাকায় হাত খরচ চালাতো রেজাউল। সে কোনোভাবে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত নয়। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিনের কঠোর বিচার দাবি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রেজাউলকে গ্রেফতারের পরপরই নির্যাতন করতে করতে গোয়েন্দা পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় তাকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এসআই মহিউদ্দিন। এ সময় তার কাছ থেকে কোনও মাদক উদ্ধার করতে দেখেননি দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।

শিক্ষনবিশ আইনজীবী রেজাউল করিমকে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে দাবি করে সোমবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর জেলা জজ আদালতের সামনে ফজলুল হক এভিনিউতে মানববন্ধন করেন আইনজীবীরা। এ সময় তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি জানান।

শিক্ষানবিশ আইনজীবী পারভেজ বীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী মহসিন মন্টু, আবুল কালাম আজাদ, মিলন ভূইয়াসহ অন্যান্যরা। রেজাউল করিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত (ডিবি) পুলিশ অফিসারের বিচারের প্রত্যাশা করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন বরিশাল আনইজীবী সমিতির সদস্যরা।

মানববন্ধনে আইনজীবী সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, রেজাউলকে বাসার সামনের চায়ের দোকান থেকে ধরে নিয়ে পরবর্তীতে নির্মমভাবে টর্চার শেষে দুইটি মিথ্যা মামলার নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, রেজাউলের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ আইনের কোনও ব্যতয় ঘটলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিমকে নগরীর সাগরদী হামিদ খান সড়ক থেকে ধরে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন। ওই রাতেই মহিউদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ৩০ ডিসেম্বর ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় তিনি কারা হাসপাতালে অসুস্থ হলে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ২ জানুয়ারি দিবারাত ১২টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। ৩ জানুয়ারি দুপুরে মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন রাতে নগরীর রূপাতলী এলাকায় সিটি করপোরেশনের গোরস্থানে দাফন করা হয় রেজাউলকে।


আরও খবর