Logo
শিরোনাম

আগামী বছরও থাকবে মূল্যস্ফীতির চাপ

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২২ ডিসেম্বর 20২২ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ৬৬০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ছয় মাস পার হয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপে। দেশে মূল্যস্ফীতির এ চাপ আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন আশঙ্কা করছে সরকার। এজন্য সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে। 

একই সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেচলতি অর্থবছর বাজেটে রাখা লক্ষ্যমাত্রার মূল্যস্ফীতির মধ্যে দেশকে আটকে রাখা যাবে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্যানুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এটা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। সরকার আশা করছে , বছর শেষে এটাও ৭ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখা যাবে।  অন্যদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে করোনা-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব এই সময় দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি পড়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ কৃষি, সেবা ও শিল্পের সার্বিক উৎপাদন কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। আবার রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও সেটি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। এসবের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, এর ফলে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে রাখা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় চলতি বাজেটে নেওয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রা থেকে কমিয়ে তা ৬ দশমিক ৭ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে। 

এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিস্থিতিই বা কোন পর্যায়ে? বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে? মুদ্রা বাজারে মুদ্রার সরবরাহ ও ভারসাম্য কী অবস্থায় রয়েছে? আমদানি ব্যয় কতটা নিয়ন্ত্রণেএর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কোন স্তরে রয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এবং বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূচক পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে আজ অর্থনীতি মূল্যায়নের বৈঠকে বসছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের এই বৈঠকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের গত পাঁচ মাসের অর্থনীতির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বৈঠকে দেশের অর্থনীতির সার্বিক চালচিত্রের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরাসহ সেই আলোকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কেমন হতে পারে, তারও একটি সম্ভাব্য রূপরেখা অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন সিনিয়র অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। এদিকে গত চার মাসে দেশে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আছে ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। সরকার রাজস্ব আয়ে এই প্রবৃদ্ধিকে সন্তোষজনক আখ্যা দিয়ে অর্থবছরের বাকি সময়ে এটা আরও বাড়বে। এমন সম্ভাব্যতা ধরে নিয়ে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রায় কোনো কাটছাঁট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার ব্যয় ধরা হলেও বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে চরম ধাক্কা খায় সরকার। দেশে বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় আমদানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু বৈশ্বিক বাস্তবতায় আমদানি পণ্য ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারকে শেষ পর্যন্ত কৃচ্ছ্র ও ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করতে হয়। অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়। কিছু প্রকল্পে অর্থ ছাড় কঠোর করা হয়। এভাবে বছরের প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ায় সরকার ধরেই নিয়েছে, এডিপি লক্ষ্যমাত্রার বড় অংশ অর্জিত হবে না। সে কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা এডিপির আকারও বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে। দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংশোধন পর্যায়ে এডিপির আকার কমতে পারে ২০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। একই কারণে সরকারের ঘাটতির হিসাবও কমবেশি হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, চলমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় প্রস্তাবিত বাজেটের অনেক লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হবে না। সরকারের উচিত সেগুলো কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকের মাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে এনে লক্ষ্যমাত্রাগুলোর যেখানে যেখানে সংশোধন প্রয়োজন, তা সুনির্দিষ্ট করা। কেননা, এই সংশোধনী বা অর্থনীতি মূল্যায়নের উদ্যোগ পরবর্তী বাজেটের প্রাক্কলন নির্ধারণেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এবং এডিপিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রাগুলোর সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। রাজস্ব আয়েও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সেখানেও হয়তো একটা মাঝারি ঘাটতি থেকে যাবে। এ দিকটিতেও সরকারের নজর দেওয়া উচিত। যদি সেটি করে থাকে তাহলে বলব, সরকার আগামীর অর্থনীতির জন্য কার্যত সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের এই বৈঠকে দেশের রাজস্ব নীতি, মুদ্রা ও আর্থিক নীতি এবং মুদ্রা বিনিময় হার নীতি ও কৌশলের মধ্যে সমন্বয় রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ এবং মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সম্ভাব্য রূপরেখা দেওয়া হবে। এর লক্ষ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে দেশে মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাত থেকে সরকারি ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বিষয়ক তথ্যাদি উপস্থাপন করা হবে। মুদ্রা সরবরাহ ও লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে।

এতে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কর, বাজেট এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতির প্রভাব সম্পর্কে কাউন্সিলের নজরে আনবে অর্থ মন্ত্রণালয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বাণিজ্য ও শুল্ক নীতির প্রভাব কাউন্সিলকে উপস্থাপন করবে বাণিজ্য সচিব। দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, সার্বিক আমদানি পরিস্থিতিসহ অর্থনীতির হাল অবস্থা তুলে ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি। বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি পাইপলাইনসহ সার্বিক চিত্র তুলে ধরবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব এবং পরিকল্পনায় মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সচিব তুলে ধরবেন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হালনাগাদ চিত্র। সবশেষে বৈঠকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব, মুদ্রা ও বহিঃখাতের অর্থনীতির চলকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনা করা হবে। এরপর ক্ষেত্রভেদে অর্থনীতির কোনো কোনো সূচকের লক্ষ্য সংশোধন বা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

নিউজ ট্যাগ: মূল্যস্ফীতি

আরও খবর

এলপিজির দাম আরও বাড়ল

বৃহস্পতিবার ০২ নভেম্বর 2০২3