Logo
শিরোনাম

টানা লোকসানে দিনাজপুরে কমছে রসুনের আবাদ

প্রকাশিত:সোমবার ১৮ এপ্রিল ২০২২ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১০৯৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

দিনাজপুরে টানা তিন বছর রসুন চাষ করে লোকসান দিচ্ছেন কৃষক। ফলে রসুন চাষে কৃষক যেমন আগ্রহ হারাচ্ছেন, তেমনি কমছে রসুন আবাদের জমি। উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ রসুনের হাট বসে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কাচিনীয়া বাজার, পাকেরহাট ও ভুল্লারহাট বাজারে। জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা আসেন এ হাটে রসুন কিনতে। বাজারে রসুনের আমদানি ও বেচাকেনা ভালো হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। ব্যাপারীরা যে দাম বলে তাতে উৎপাদন খরচ ওঠে না কৃষকের।

খানসামা উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরে ছিল ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর। গত মৌসুমেও রসুনের ভালো দাম না থাকায় এ উপজেলায় এবারো কমেছে  আবাদ।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার আগ্রা, গুলিয়ারা ও গোয়ালডিহিসহ প্রায় সব গ্রামেই রসুন চাষ হয়েছে। এ সময় কৃষক জমি থেকে রসুন তোলা, বাজারজাত ও সংরক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাচিনীয়া হাটে রসুন বিক্রি করতে আসা কৃষক রাম প্রসাদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ৫ টাকা কেজি রসুন বিক্রি করি কামাইলের খরচ ওঠে না। একটা কামাইলক সারা দিন কাম করাইলে ৫০০ টাকা দিবার হয়। সার, বিষের দাম বাড়ি গেইছে, ডিজেলের দামও বাড়ি গেইছে, খালি রসুনের দাম কমেছে। গেলবার দুই বিঘা জমিত রসুন লাগাইছিনু, এইবার এক বিঘা জমিত রসুন আবাদ করিও লস।’

খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের চককাঞ্চন গ্রাম থেকে রসুন বিক্রি করতে আসা আজিজুল ইসলাম বলেন, গেলবারও রসুনের দাম আছিল না। এইবারও দাম নাই। মানুষ ধীরে ধীরে রসুন আবাদ করা ছাড়ি দেছে। এর চেয়ে ভুট্টা আবাদ করা ভালো। এখন বাজারত রসুনের চেয়ে ভুট্টার দাম বেশি। এক কেজি ভুট্টা বিক্রি হয় ২৩ টাকা আর রসুন বিক্রি হয় ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি।’ 

গোয়ালডিহি গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, গত দুই বছর ধরে রসুনের দাম আর আগের মতো নেই। আগে আমরা রসুন পাইকারি বাজারে দুই থেকে তিন হাজার টাকা মণ বিক্রি করতাম। এখন মাত্র ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। এতে খরচের টাকা তোলা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।’

১৫ বছর ধরে কাচিনীয়া হাটে রসুন কিনছেন রংপুরের বদরগঞ্জের শাফিউল আলম। এ হাট থেকে রসুন কিনে বদরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি জানান, তিন বছর ধরে রসুনের বাজার নিম্নমুখী। বিগত বছরগুলোয় বাজারে রসুনের আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। একটা সময় ৯০-১২০ টাকা কেজি পর্যন্ত পাইকারি রসুন কিনেছেন তিনি। এখন সেই রসুন ৫ টাকা কেজিতেও পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীন থেকে প্রচুর পরিমাণে রসুন আমদানি করা হয়। পাইকারি বাজারে বিদেশী রসুনের আমদানি বন্ধ করলে দেশী রসুনের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন চাষে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, হাল ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় রসুনের ফলন হয় ৪৫-৬০ মণ। বাজারে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। বিগত ১০ বছরে রসুনের বাজার কখনো এতটা নিচে নামেনি।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান জানান, রসুন একটি উল্লেখযোগ্য মসলা জাতীয় ফসল। বিগত বছরগুলোয় জেলায় বাম্পার রসুনের আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন কৃষক। আবাদ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষক সাধারণত যে ফসলে বেশি লাভবান হন সেটিই আবাদ করেন। বিগত বছরগুলোয় ভুট্টার দাম ভালো পাওয়ায় অনেক কৃষক রসুনের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদ করেছেন। আবার রসুনের দাম ভালো পেলে রসুন আবাদ করবেন। এখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কৃষককে এখনই সব রসুন বিক্রি না করে কিছুদিন পর বিক্রি করলে দাম বেশি পাবে বলে জানান এ কৃষিবিদ।


আরও খবর

শখের নার্সারিতে সফল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মনির

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

জয়পুরহাটে ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ

মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩