Logo
শিরোনাম

হাতীবান্ধায় অবাধে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন: নিরব প্রশাসন

প্রকাশিত:সোমবার ২৮ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২৪২৫জন দেখেছেন
Image

লালমনিরহাট প্রতিনিধি :  

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা নদী থেকে ইজারা ছাড়াই অবাধে বালু উত্তোলন করছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। নদী থেকে বালু বা মাটি বিক্রির জন্য সরকারের অনুমতির বিধান থাকলেও অনুমতি নেয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করেননি প্রভাবশালী ওই মহলটি।

এরফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকাসহ আশেপাশের ফসলি জমি।

জানা যায়, উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর উত্তর ধুবনী এলাকায়ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা লন্ড্রি আজিজার সহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হাওয়ায় স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে  প্রকাশ্যে কোনো অভিযোগও করতে সাহস পাচ্ছেন না।

দিনে দুপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। এলাকাবাসী মধ্যে অনেকেই গোপনে স্থানীয় প্রশাসনকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানালেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন তারা।

জানা গেছে, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা-৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ,বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন,রেললাইন, ও অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে নদী থেকে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালু তুলছেন এই  প্রভাবশালী মহলটি। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে অনেক ফসলি জমি ও বাড়িঘর ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার আবাদি বেশিরভাগ জমি হুমকিতে পড়েছে।

আর প্রতিদিন ট্রাক্টরে করে অবৈধ বালু পরিবহনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে হাজীর মোড় হতে ডিগিরহাটের চলাচলের একমাত্র পাকা সড়কটি। এরমধ্যেই ভারী যানবাহন চলাচলের কারনে সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। বেপরোয়া গতির এ ট্রাক্ট্রর এখনি বন্ধ করা না গেলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলেও বিভিন্ন সময় দেয়া হয় হুমকি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রাক্ট্রর মালিক জানান,  প্রতিদিন গাড়ী প্রতি ৫৫০ টাকা করে সাংবাদিক ও পুলিশের জন্য আমাদের কাছ থেকে আদায় করেন ইব্রাহীম ও লন্ড্রি আজিজার। কাকে এবং কিভাবে এ টাকা বন্টন করা হয় এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, সেটা আজিজার ও ইব্রাহীম বলতে পারে।

তারা আরও বলেন, আমরা গত ১৫দিন ধরে ইউপি চেয়ারম্যান দুলুর নবনির্মিত রাইস মিলে বালুগুলো দিচ্ছি। নদীর বালু কেন দিচ্ছেন জানতে চাইলে এর কোন উত্তর তারা দিতে পারেন নি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজার নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করলেও সাংবাদিক, পুলিশের নামে টাকা আদায়ের কথাটি তিনি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, নিউজ করে কি করবেন এখানে আরও বড় বড় মিয়ারা জড়িত আছে আপনাদের মত সাংবাদিক আমার কিছুই করতে পারবে না।

আপনাদের মত দু'চারজন আমার পকেটেও আছে। এসময় জনৈক সাংবাদিকের নাম উচ্চারণ করে এ প্রতিনিধিকে তিনি দেখে নেয়ার হুমকিও দেন।

সিঙ্গীমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু এর সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি এ প্রতিনিধির ফোন রিসিভ করেননি।

হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ( ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অনেকবার ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। গাড়ি নিয়ে এসে কয়েকদিন থানায়ও রেখেছিলাম গাড়ি ধরলেই তারা বলে মসজিদে দিচ্ছি মন্দিরে দিচ্ছি। আমাদের অভিযান চলমান আছে তার পড়েও অবৈধ বালু উত্তোলন কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, অভিযান অব্যাহত আছে। এরপরেও যদি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়ে থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন আবু জাফর বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। আমরা অভিযোগ পেয়েছি স্থানীয় দু'একজন চেয়ারম্যান বালু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরও খবর